Friday , October 4 2024
Breaking News

উন্নত দেশ হতে চাইলে কী চাই, জানাল বিশ্ব ব্যাংক

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়তে আর্থিক খাতের সংস্কার, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নত আন্তঃনগর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম : চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নোরা দিহেল দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

জাহিদ হোসেন বলেন, “গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে অবকাঠামো খাতের বিনিয়োগ। কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে হলে ২০৩১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ১০ দশমিক ২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি করতে হবে।”

এই প্রবৃদ্ধির জন্য এখন থেকেই দেশে ব্যাপকহারে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আবার এই বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে দেশের সকল পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিজিটাল সক্ষমতা বা ডিজিটাল ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।”

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে রপ্তানিকে বহুমুখীকরণে জোর দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “বর্তমানে রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ পোশাক খাতের। রপ্তানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।”

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সক্ষমতায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য টেনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের গড় শুল্ক হার ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এই শুল্ক চীন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় এবং অদক্ষ সীমান্ত প্রক্রিয়া বাণিজ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।”

দেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে ড. জাহিদ বলেন, “শুল্ক আধুনিকীকরণ, বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি, পরিষেবা এবং বিনিয়োগ সংস্কারের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের সাথে ব্যাপকভাবে বাণিজ্য বাড়তে পারে। বাংলাদেশ জিডিপি ০.৫ শতাংশ এবং রপ্তানি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।”

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশের প্রধান আর্থিক খাত ব্যাংক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

“আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতভাবে ঋণ প্রবৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এই খাতের অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়। এদেশে নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল) প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ বিষয়টি শক্তভাবে মোকাবিলা করা জরুরি।”

বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক পরামর্শক ড. জাহিদ বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় যথেষ্ট অর্থ জমা নেই। বড় বড় বিনিয়োগকারীদের অর্থ সরবরাহ জোগান দিতে সক্ষম নয় আমাদের ব্যাংক।

“দেশে লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ এনপিএল হিসেবে পড়ে আছে। তাই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অর্থ সরবরাহ যথেষ্ট নয়।”

দেশে শক্তিশালী পুঁজিবাজার প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “থাইল্যান্ড, চীন ও ভিয়েতনামে শক্তিশালী পুঁজিবাজার রয়েছে। তাদের পুঁজিবাজার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শহরে চলে আসছে। সেই মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে জিডিপিতে সুফল মিলতে পারে বলে মনে করেন ড. জাহিদ। 

উন্নত আন্তঃনগর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার উন্নত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, “ঢাকার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য শহরগুলোর সঙ্গেও ঢাকার একই রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও বেগবান করবে।”

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন, জনগণের দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া এবং শিক্ষার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে।

“আরও উন্নতি করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে থাকব।”

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আকাশে মেঘ জমে যাওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকতে পারে। তবে আমরা আশা করি, কালো মেঘের ঝড় আসবে না; কারণ এটি সবার জন্য অশুভ হবে…।”

রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সহিংসতার রাজনীতি পরিহার করে আলোচনার পথে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি ড্যানড্যান চেন বলেন, “গত এক দশকে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই।

“…২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের রূপকল্প অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে শক্তিশালী ও রূপান্তরমূলক নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

সংস্থার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নোরা দিহেল বলেন, “বৃহত্তর ঢাকা দেশের জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ এবং আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রায় অর্ধেক তৈরি করে। জলবায়ু অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানে বড় অংকের পুঁজি খাটানো দরকার।”

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সোনিয়া বশির কবির প্যানেল আলোচক ছিলেন।

About Banglar Probaho

Check Also

আ.লীগ ও সহযোগীদের কাছে লোক চেয়েছে যুবলী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published.