বছর পাঁচেক আগে ফেসবুকে ‘সিরিয়ালখোর’ নামের গ্রুপে কেবল আলোচনা হতো বিদেশি বিভিন্ন টিভি ও ওয়েব সিরিজ নিয়ে। কেউ লিখতেন ব্রেকিং ব্যাড নিয়ে, কেউবা বলতেন গেম অব থ্রোনস নিয়ে। কেউ কেউ সন্ধান দিতেন অ–ইংরেজিভাষী ইউরোপিয়ান বিভিন্ন থ্রিলার সিরিজের। নেটফ্লিক্সের সেক্রেড গেমস দিয়ে ভারতীয় ওয়েব সিরিজ জনপ্রিয় হয়, মহামারির সময় তো বলা যায় দেশটির বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর রীতিমতো উত্থানই হয়েছে। আগে বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ হতো না, শুরুর দিকে যা–ও হতো, সেগুলো নিয়েও তেমন আলোচনা হতো না। কিন্তু গত দুই বছরের বদলে গেছে দৃশ্যপট। বিদেশি সিরিজের পাঁড় ভক্তরাও এখন মজেছেন দেশি সিরিজের জাদুতে। এখন ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে ঢুঁ মারলেই দেখা যায়, বাংলাদেশি সিরিজ নিয়ে আলোচনা। কাটাছেঁড়া, অভিনেতা, দৃশ্য ধরে ধরে বিশ্লেষণ; কেউ লিখছেন ‘ক্লিফ হ্যাঙ্গার’ রেখে শেষ হওয়া সিরিজের পরের কিস্তিতে কী হতে পারে সে সম্পর্কে।
করোনা মহামারির মধ্যে একের পর এক ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেয়েছিল, তার মধ্যে কয়েকটি কনটেন্ট লুফে নিয়ছিল দর্শকেরা। এর ধারাবাহিকতায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো ওয়েব সিরিজ নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা করছেন। শুধু ঢাকায় নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকাই সিরিজের সুখ্যাতি।
বেশ কয়েকজন ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলকাতার ওয়েব সিরিজের তুলনায় ঢাকার ওয়েব সিরিজকে তারা এগিয়ে রাখছেন। মূলত বাংলাদেশের নিজস্ব গল্পের ছাপ, এ দেশের সিরিজকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।
ঢাকার মগবাজারের দর্শক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহও মনে করেন, গল্পই ঢাকাই সিরিজকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তার মতে, ‘বাংলাদেশের ওয়েব সিরিজের গল্প একদম আলাদা। ওটিটি আসার পর ব্যতিক্রম সব গল্প উঠে আসছে। এখন আমরা দেখছি ফ্রিজার ভ্যান চালকের গল্প, জেলের ভেতরের গল্প কিংবা ভৌতিক গল্প তুলে আনা হয়েছে। এই গল্পগুলো আমাদের আশপাশেরই গল্প, খুব চেনা।’
ওয়েব সিরিজের নির্মাতা হিসেবে আশফাক নিপুণ, নুহাশ হুমায়ূন, তানিম নূর, সৈয়দ আহমেদ শাওকি, মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম প্রশংসিত হয়েছেন। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, ইন্তেখাব দিনার, তাসনিয়া ফারিণ, নাসির উদ্দিন খান, মোস্তাফিজুর নূর ইমরানসহ অনেকেই আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন।
ভৌতিক গল্পে ‘পেট কাটা ষ’ নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন নুহাশ হুমায়ূনছবি: সংগৃহীত
আশফাক নিপুণের মহানগর দেখে তাঁকে ফোন করে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন ভারতীয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুম মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আগামীতে সিনেমা বানানোর আগে ওটিটিতেই নিয়মিত কাজের পরিকল্পনার কথা জানান পরিচালক।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ওয়েব সিরিজে যেকোনো গল্প বড় দৈর্ঘ্যের বলা যায়। আমরা টিভিতে সব সময় ৪০ মিনিট আর ১৭ মিনিটের কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত। সিনেমা করলে দুই ঘণ্টার। একটা ওয়েব সিরিজ তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে। দর্শকও সেই গল্প দেখছে। ওয়েব সিরিজ করলে অনেক চরিত্র নিয়ে কাজ করা যায়। আপনি টিভিতে দুটি চরিত্রের বাইরে খুব বেশি কাজ দেখতে পাবেন না।’
গল্পের সঙ্গে সম্পাদনা, ক্যামেরার কাজেও ঢাকার উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করেন নুহাশ হুমায়ূন। তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা, কালার গ্রেডিং, মিউজিকের কাজ আন্তর্জাতিক মানের দিকে যাচ্ছে। অনেক বছর আমরা কারিগরি ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলাম। সেটার উন্নতি ঘটেছে।’ নুহাশ হুমায়ূনের একটি ওটিটি কনটেন্ট শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হুলুতে মুক্তি পাবে।
ওয়েব সিরিজে যেকোনো গল্প বড় দৈর্ঘ্যের বলা যায়। আমরা টিভিতে সব সময় ৪০ মিনিট আর ১৭ মিনিটের কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত। সিনেমা করলে দুই ঘণ্টার। একটা ওয়েব সিরিজ তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে। দর্শকও সেই গল্প দেখছে। ওয়েব সিরিজ করলে অনেক চরিত্র নিয়ে কাজ করা যায়। আপনি টিভিতে দুটি চরিত্রের বাইরে খুব বেশি কাজ দেখতে পাবেন না।