তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন মনে করছে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস।যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আদতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে সৌদি আরব। কেননা তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া ওপেক প্লাসের সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মনে করা হতো সৌদিকে। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন বাইডেন প্রশাসন।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ইতি টানতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরইমধ্যে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করেন যে, সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা উচিত। সেই সম্পর্কটি কোথায় থাকা দরকার এবং এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে কিনা তা দেখতে হবে।’
সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের এই পদক্ষেপটি ‘ওপেক এবং সৌদি নেতৃত্বের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের আলোকে’ এসেছে বলেও জানান জন কিরবি।
ইতোমধ্যে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের কয়েকজন আইন প্রণেতা।
নিউ জার্সি রাজ্যের টম ম্যালিনোস্কি, ইলিনয় রাজ্যের সিন কাস্টেন এবং পেনসিলভানিয়া রাজ্যের সুসান ওয়াইল্ড সম্প্রতি একটি খসড়া আইনের প্রস্তাব করেছেন। এটি পাস হলে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পাশাপাাশি প্যাট্রিয়ট এবং টিওডি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে মার্কিন সরকার বাধ্য হবে।
সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধের জোরালো দাবি উঠেছে। মার্কিন সিনেটের ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা বব মেনেন্দেজ রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধের দাবি জানান।
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতাদের পদক্ষেপটি আসলে ওপেক প্লাসকে ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন হ্রাস করা থেকে বিরত থাকার জন্য মার্কিন দাবির প্রতি রিয়াদ কর্ণপাত না করায় ওয়াশিংটনের ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। কারণ সৌদি আরব এ সংস্থার অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য।
আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন কংগ্রেসে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওপেক প্লাসের এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকায় সব ধরনের জ্বালানীর দাম বিশেষ করে গ্যাসোলিনের দাম বেড়ে গেলে তা ডেমোক্রেট দল এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।