দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের বাঁধভাঙা উত্তাল স্রোত দেখে সরকারের নেতামন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ সোমবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আমাদের মাত্র দুটি গণসমাবেশ অবলোকন করেই বিনাভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। চট্টগ্রামের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্র দেখে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়, বিএনপির সমাবেশে তাও হয়নি। বিএনপি হাঁকডাক করে মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ফ্লপ সমাবেশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে সম্ভবত হাছান মাহমুদ সাহেবই একমাত্র তথ্যমন্ত্রী, যিনি সঠিক তথ্যকে টিনের বাক্সে তালা দিয়ে অসত্য তথ্য সম্প্রচার করেন। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসী, পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম-সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছে, জনসভাস্থল ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সরকার পতনের দাবিতে ঘর ছেড়ে আসা মানুষের ঢল। কেবল দেখতে পাননি হাছান মাহমুদ। আমরা রাতকানা শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম দিনকানা লোক দেখলাম।’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আপনারা নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। আপনারা যদি (বিএনপি ঢাকায় ১০ লাখ লোক সমাগম করলে আওয়ামী লীগ ৩০ লাখ লোক সমাগম করতে পারবে) ব্যাপক লোক সমাগম করতে পারেন, তবে নিশিরাতে ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট করতে হয় কেন? ভোটের দুই তিন মাস আগে থেকে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন কেন, অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেন কেন, গুম ও ক্রসফায়ায়ের আশ্রয় নেন কেন?
রিজভী বলেন, গত ১৪ বছর ধরে সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার মানুষ সর্বশক্তি নিয়ে সারা দেশে জেগে উঠেছে। গুম খুন অপহরণ, হামলা, মামলা জুলুম করে এতদিন মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। জনগণ আর ঘরে বসে বসে মাফিয়া সরকারের হাতে অসহায়ের মতো জানমাল হারা হতে চায় না। জনগণ এবার আটঘাট বেঁধে শেষ প্রস্তুতি নিয়েই সকল বাধার বিন্ধ্যাচল উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা গগনবিদারী স্লোগান তুলেছে, ‘হঠাও মাফিয়া, বাঁচাও দেশ- টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’
‘দুর্ভিক্ষ আসছে’ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘তাদের উন্নয়ন ভেসে গেছে বঙ্গোপসাগরে। ১৪ বছর দেশ চালিয়ে দেশটাকে ভেন্না গাছে তুলে এখন তাদের বাচাল গল্পবাজ মন্ত্রীরা আর ইউরোপ আমেরিকা সিঙ্গাপুরের গল্প শোনায় না। তবে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন না হলেও প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং তাদের স্বজন, পরিবার আত্মীয়দের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছে-রাজপ্রাসাদ গড়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন স্বীকার করছেন, দেশ সংকটের দিকে যাচ্ছে। সামনের পরিস্থিতি খারাপ। রিজার্ভ সংকট, ডলার নাই, তাই তেল-গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না!
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।