সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী আবদুল আজিজ বিন সালমান ভিয়েনায় ওপেকের বৈঠকে কথা বলছেন।
ম্প্রতি ওপেক ও সহযোগি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমানো ও অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তেল ব্যবহারকারী দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি এমন অভিযোগও উঠছে যে উপসাগরীয় দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাশিয়ার পাশে দাঁড়াচ্ছে যার মূল্য দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে ১৩ জাতির ওপেক ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ১০টি সহযোগি দেশের জোট জানায় যে বুধবার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে তারা আগামী নভেম্বর থেকে তেলের উৎপাদন প্রতিদিন দুই মিলিয়ন ব্যারেল কমিয়ে দেবে।
এদিকে প্রায় এক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল উৎপাদন না কমাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বজায় রাখার পরও ওপেকের এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে জো বাইডেন প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো যখন দেশটির পাম্পগুলোতে তেলের দাম বাড়ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজেদের মানসিকভাবে তৈরি করছেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জেন পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওপেক ও সহযোগি দেশগুলোর এই সিদ্ধান্ত সুদূরপ্রসারি নয় কেননা সমগ্র বিশ্ব পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে এখনও অর্থনৈতিকভাবে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে।’
কারিন বলেন, ‘এটা পরিস্কার যে ওপেক ও তার সহযোগি দেশগুলো এই ঘোষণার মাধ্যমে রাশিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
তবে ওপেক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংস্থাটির মহাসচিব হাইথাম আল-ঘাইস শুক্রবার বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত অন্য একটি দেশের বিরুদ্ধে কোনো দেশের সিদ্ধান্ত নয়।’ আল আরাবিয়া টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে আল-ঘাইস বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে পরিষ্কার করতে চাই যে এই সিদ্ধান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের বিরুদ্ধে দুটি বা তিনটি দেশের সিদ্ধান্ত নয়।’
ওপেকের অন্যতম প্রভাশালী দেশ সৌদি আরব বলেছে পশ্চিমা দেশগুলোর সুদের হার বৃদ্ধি ও দুর্বল বিশ্ব বাণিজ্যের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এ বিষয়ে কুয়েতের ভারপ্রাপ্ত তেলমন্ত্রী মোহামেদ আল-ফারেস বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে ভোক্তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আমরা বুঝি কিন্তু এ বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে চাহিদা ও সরবরাহের সমন্বয়ের ওপর।’
তবে এই ব্যাখ্যাকে নাকচ করে দিয়ে ক্রিষ্টল এনার্জির কনসালটেন্সি প্রধান ক্যারল নাখলে আল জাজিরাকে বলেন, ‘বাজার নিজে থেকেই ভারসাম্য তৈরি করে, চাহিদা ও যোগানের মিথস্ক্রিয়ার মূল বিষয় হচ্ছে এটি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে যদি আপনি দামের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেন তাহলে হয়তো ওপেক যে দাম নির্ধারণ করছে তার নীচে তেলের দাম চলে আসতে পারে।’
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণে ওপেকের এই উদ্যোগ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানে যে পর্যায়ে রয়েছে তা থেকে নড়বে না এই সময়ের উত্তপ্ত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার কারণে।