টাঙ্গাইলে কয়েক দফায় বন্যায় চার হাজার ৬৮০ জন মৎস্য চাষী ব্যাপক লোকশানের মুখে পড়েছে। জেলায় ৫ হাজার ৩২৭টি পুকুর ও মাছের ঘের বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পোনা মাছ থেকে শুরু করে সকল ধরনের মাছ স্রোতে ভেসে গেছে। বন্যায় মৎস্য চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। এতে মৎস চাষীরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। তারা এখনো পাননি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস চাষীরা সরকারি প্রনোদনার আশায় দিন গুনছেন।
বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার টাঙ্গাইলে বন্যার প্রকোপ ছিল বেশি। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুর ও ঘের থেকে মাছ বেড়িয়ে যাওয়ায় এবার ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক। টাঙ্গাইলে অসংখ্য পুকুর, জলাশয়, ঘের, বীল, ডোবা থাকায় এখানে মাছ চাষ হয় বেশি। এই মাছ ব্যবসার উপর ভিত্তি করে জীবীকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ চলে যায় অন্য জেলায়। জেলার ১২টি উপজেলায় রয়েছে ৪ হাজার সাত শত বেরান্বই মৎস্য চাষী। বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে তারা মাছ চাষ করে থাকেন। কিন্তু এবার মাছ ধরে রাখতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্য চাষীরা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বন্যায় ১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।
কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের মুক্তার আলী নামের এক মৎস্য চাষী বলেন, আমি অন্যের পুকুর বছর ভিত্তিক ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এবারের বন্যায় আমার ৩টি পুকুর তলিয়ে মাছ বের হয়ে গেছে। আমার এই ক্ষতির জের যে কত দিন টানতে হবে সেটা আল্লাহ জানেন।
মুক্তার আলীর মতো আরো অনেক ক্ষতিগ্রস্থ চাষী বলেন, একদিকে করোনা ভাইরাসে ব্যবসা বাণিজ্য নেই। এর উপর বন্যায় একেবারে শেষ করে দিলো। আমাদের পথে বসার পরিস্থিতি হয়ে গেছে।
এদিকে বিবিন্নস্থানে ঘুরে দেখা যায় বন্যার নতুন পানিতে ধর্ম জাল, কারেন্ট জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের হিড়িক পড়ে গেছে। যে মাছ গুলো ধরা পড়ছে সেগুলো অধিকাংশই তলিয়ে যাওয়া পুকুরের চাষের মাছ। সেই মাছ মেরে অনেকে আবার বিক্রিও করছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, অনেক খামারি ঋণ করে মাছের ব্যবসা করছেন। তদের একেবারে সর্বনাশ। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকারি আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, খামারিদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগতসহ সার্বিক সাহায্য করা হবে।