স্থায়ী বহিষ্কার করার প্রতিবাদে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীরা আমরণ অনশন করতে অবস্থান নিয়েছেন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কার্যালয়ে প্রবেশের সময় বাধাপ্রাপ্ত হন বহিষ্কৃত নেত্রীরা। তারপর প্রতিবাদের মুখে তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। প্রতিবাদকারী নেত্রীরা প্রবেশের পরপরই গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে সকালে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের প্রতিবাদে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন বহিষ্কৃতরা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দেয়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। অন্যথায় আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বহিষ্কৃতরা বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে যেখানে বিচার পাওয়ার কথা, সেখানে উল্টো তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আর যারা নির্যাতন করেছে, তারা বহাল তবিয়তে আছে। মূলত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় অপরাধ করেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও তাদের অনুসারীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছার আগে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম হলো “বিনা তদন্ত বহিষ্কার, নেপথ্যের কারণ”, কি কারণে স্থায়ী বহিষ্কার, আমার অপরাধ, আমি কেন নির্যাতিত সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছি। ইডেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিসহ বিস্তর অভিযোগ, তা সত্ত্বেও তাদের বহিষ্কার করা হয়নি।’
অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে রোববার ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের মারামারির ঘটনার পর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত ও ১৬ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ।
এদিকে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কার ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়।
বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
সেই সঙ্গে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা ও সূচনা আক্তারকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইডেন কলেজের অডিটোরিয়ামের সামনে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈসহ আহতদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।
সে সময় একটি পক্ষ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাস থেকে বের না করা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবে বলে জানায়। আরেক পক্ষ শনিবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) ঘটনার ভুক্তভোগী পক্ষের অংশকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে অবস্থান করে।
এর আগে, শনিবার রাতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার চাঁদাবাজি ও সিট বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়ায় কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে হল থেকে মারধর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এরপর ওইদিন রাত ১১টার দিকে মুখোমুখি অবস্থান নেয় কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে নির্যাতনের অভিযোগে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা, সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা ও তাদের অনুসারী সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর রিভা এবং রাজিয়ার বিভিন্ন অনিয়ম, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য ও হল দখল নিয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন জান্নাতুল ফেরদৌস। এর দুদিন পর শনিবার রাত ১১টার দিকে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় তাকে হেনস্তা করারও অভিযোগ ওঠে।
গত ২৬ আগস্ট গণমাধ্যমে রিভার বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ‘ইডেনের ডন রিভা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে রিভার বিরুদ্ধে ‘দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি’, ‘ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়া’সহ সিট বাণিজ্য, ক্যান্টিন থেকে চাঁদা দাবি’ সহ বিভিন্ন বিষয় ওঠে আসে।