ভারত চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বাণিজ্যিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এশিয়ার চালের বাজারে। বিকল্প উৎস ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের চাল কিনতে চেয়েও পাচ্ছেন না এই অঞ্চলের ক্রেতারা। ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বেড়ে গেছে দাম। এর ফলে এই তিন দেশের ব্যবসায়ীরাও আপাতত চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যশস্য রফতানিকারক দেশ ভারত। কিন্তু দেশটিতে বর্ষা মৌসুমে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় ধান উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ফলে দেশীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভাঙা চালের রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। একই সঙ্গে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের চালের রফতানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানির উৎপাদনকারী রাশিয়ার জ্বালানি ও খাদ্যশস্যের সরবরাহ ভেঙে পরায় বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে সরবরাহ সংকট ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার নানা ধরনের রফতানি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে।
এর মধ্যেই ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় ইতোমধ্যে এশিয়ার বাজারে চালের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্বেগ সত্ত্বেও চলতি সপ্তাহে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক কোম্পানি সত্যম বালাজির নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগারওয়াল বলেছেন, “এশিয়াজুড়ে চালের ব্যবসা স্থবির হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি করে কিছু করতে চান না।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে চালের চালানের ৪০ শতাংশের বেশি ভারতের। তাই আগামী মাসগুলোতে চালের দাম কতটা বাড়বে তা কেউ নিশ্চিত নন।”
বিশ্বের ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। ২০০৭ সাল ভারত যখন চাল রফতানি নিষিদ্ধ করে তখন বিশ্ববাজারে এর দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। সেই সময় প্রতি টন চালের দাম বেড়ে প্রায় ১ হাজার ডলারে দাঁড়ায়।
গত বছর ভারতের চাল রফতানি রেকর্ড ২ কোটি ১৫ লাখ টন ছুঁয়েছে। ভারতের এই চাল রফতানি বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রফতানিকারক চার দেশ— থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট রফতানির চেয়েও বেশি।
বিশ্বে চীনের পর চালের প্রধান ভোক্তা দেশও ভারত। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি চালের মার্কেট শেয়ার রয়েছে ভারতের। অভ্যন্তরীণ উচ্চ মজুত আর স্থানীয় বাজারে কম দামের কারণে গত দুই বছর ব্যাপক ছাড়ে চাল বিক্রি করেছে ভারত, যা এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশকে গমের দামের ঊর্ধ্বগতির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করেছে।
বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে চাল রফতানি করে ভারত। দেশটির চালান হ্রাস পেলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে।