বছরের পর বছর মেঘনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নোয়াখালীর হাতিয়ার চানন্দী, নলচিরা, চরকিং ও চরঈশ্বর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে উপকূলের কয়েক হাজার পরিবার।
একসময় শুধু বর্ষায় থাকলেও বর্তমানে বছরজুড়েই চলে এ ভাঙন। এতে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। এসব পরিবারের স্থান হয়েছে বিভিন্ন বেড়িবাঁধে। কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিলেও স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি গত এক যুগেও। তিন সন্তানের জননী সাজেদা বেগম। ১ ছেলে ২ মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। দক্ষিণ হাতিয়ায় ভাঙনের শিকার হয়ে বসতি গড়েছিলেন চানন্দী ইউনিয়নের চর বাশার গ্রামে। সেখানে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বসবাস করার পর নদীতে বিলীন হয় ভিটেমাটি। ভাঙনের পর আশ্রয় নেন পাশের আলীনগর গ্রামে। সেখানে বছর পাঁচেক টিকে থাকতে পারলেও, আবারও ভাঙনের শিকার হয়ে সবশেষ বসতি স্থাপন করেন একই ইউনিয়নের রসুলপুরে। আরও পড়ুন: নদী ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দের আড়াই হাজার কোটি টাকা জলে কিন্তু গত কয়েক দিনে মেঘনা গিলে খেয়েছে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা। এতে সাজেদা বেগমের মতো অনেকেরই শেষ সম্বলটুকুও বিলীন হওয়ার পথে। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। সাজেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা অনেক বিপদে আছি। আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে নদী। এখন ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছি। আমাদের পাশে কেউ নেই।’ স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, চরঈশ্বররে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার বাড়ি ছিল। এখন অর্ধেক পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। শুধু হাতিয়া নয়, ভাঙনের কবলে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। ভাঙনে নিঃস্ব হওয়ার তালিকা দীর্ঘ হলেও স্থায়ী ভাঙন রোধে আশ্বাসেই দায় সারে কর্তৃপক্ষ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, ‘একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমরা দ্রুত তা বাস্তবায়নে চেষ্টা করব। আশা করি, এটি বাস্তবায়ন হলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পারব।’ চানন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহার উদ্দিন বলেন, হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি চলে গেছে। মানুষ যদি না খেতে পায়, অন্তত বাড়িঘর থাকলে তো মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে। কিন্তু সব চলে গেছে নদীতে।’ দ্রুত ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান এলাকাবাসীর।নোয়াখালীনদী ভাঙনমেঘনা নদীনদী গর্ভে বিলীন