দেশের নদীগুলো ভালো নেই—এ নিয়ে দ্বিমত করারও কোনো সুযোগ নেই। প্রায় দিনই সংবাদমাধ্যমের খবরের শিরোনাম থাকে নদীর মরণদশা নিয়ে। নদী খনন ও উন্নয়নে কম অর্থও খরচ করছে না সরকার।
সেগুলো আবার দখল হয়ে যেতেও দেরি হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শহর এলাকার নদীগুলো। কারণ, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে গোটা শহরের বর্জ্যের ভার বহন করতে হচ্ছে নদীগুলোকেই। আবাসিক ভবন, বিভিন্ন দোকানপাট, মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের কারণে দখল তো আছেই। উচ্ছেদ করেও বেশি দিন আর নদীর জায়গা দখলমুক্ত রাখা যায় না।
এখানে সরকারি প্রশাসন, স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিরা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি কিশোরগঞ্জ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদীটির ক্ষেত্রে।
নরসুন্দা তার যৌবন হারিয়েছে আগেই। ফলে সেটিকে এখন খাল বললে ভুল হবে না, তা-ও আবার মরা খাল। নদীটিকে স্বরূপে ফেরাতে, নাব্যতা ফিরিয়ে গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে পুনঃখনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে শুরু হওয়া প্রকল্প শেষ হয় ২০১৬ সালে।
নদীটির ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে হয় উন্নয়নকাজ। কিন্তু এর কোনো ফল মেলেনি। নদীর অবস্থান তো পরিবর্তন হয়ইনি; বরং শহরের ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে সেটি। সেই সঙ্গে নদীর দুই পাশে চলছে দখলের মহোৎসব। এত বিপুল অর্থ খরচ করার পরও কেন এমন হলো? এ প্রকল্প ঘিরে লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার হিসেবে ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব নদী দিবস। এদিন জেলা প্রশাসন আলোচনা সভার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। এরপর জেলা প্রশাসক ও পুলিশের সুপারের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা শহরের সড়ক প্রদক্ষিণও করে। বোঝাই যাচ্ছে, দিবস পালনে একটি স্বাভাবিক আনুষ্ঠানিকতা।
অথচ শহরের নরসুন্দা নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে দিবসটি পালন করা যেত আরও উৎকৃষ্টভাবে। নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ও দখলমুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনের দায়সারা ভাব প্রকাশ পেয়ে আসছে আগে থেকেই। নয়তো নদীটির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে খালে পরিণত হতো না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কেন শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে না? কেন দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাবে না? এখন হয়তো নদী উদ্ধারে আবার প্রকল্প নেওয়া হবে, আবার অর্থ অপচয় ও লুটপাটের অভিযোগ উঠবে, কিন্তু নদীটি স্বরূপে ফিরবে তো? নদীর প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করার মতো সেই প্রশাসন ও কর্মকর্তা কোথায় পাব আমরা?