ছাদখোলা জিপ এসে থামতেই শুরু হয় জয়ধ্বনি। মুহুর্মুহু স্লোগান আর ঢোলের বাদন। উৎসবমুখর পরিবেশ। চট্টগ্রামে এভাবে বরণ করে নেওয়া হয় সাফ শিরোপা জয়ী পাঁচ নারী ফুটবলারকে। পায়ের জাদুতে হিমালয়কন্যা নেপালকে পরাজিত করে তাঁরা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা করেছেন।
নারী ফুটবল দলের এই পাঁচ সদস্যের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে। ঢাকা থেকে গতকাল বুধবার বাড়ি ফেরেন তাঁরা। তাঁদের ঘরে ফেরার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রাম শহরে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। বিকেলে নগরের জামালখান মোড়ে ‘আঁরার মাইয়া, আঁরার গর্ব’ নামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক আজাদী।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান নারী ফুটবলাররা। সংবর্ধিত পাঁচ নারী ফুটবলার রাঙামাটির রুপনা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা এবং খাগড়াছড়ির মনিকা চাকমা, দুই বোন আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তাদের কণ্ঠে ছিল পাহাড়ি কন্যাদের জয়গান। তাঁরা বলেছেন, সাফল্যের এই যাত্রা সবে শুরু হলো; সেটি যেন থেমে না যায়। তাঁদের হাত ধরে একদিন এশিয়া ও বিশ্বজয় করবে বাংলাদেশ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাবের সাবেক জেলা গভর্নর কামরুন মালেক বলেন, মেয়েদের পথ চলা সহজ ছিল না। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মেয়েরা আজ জয়ী হয়েছেন। অদম্য সাহস ও মনোবলের সঙ্গে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। আজ সে পরিশ্রমের ফল পাওয়া গেল।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এখানে থেমে থাকলে হবে না। কঠোর পরিশ্রমের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই মেয়েদের হাত ধরে নারী ফুটবল এগিয়ে যাবে।
সাফ জয়ী নারীদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, এই মেয়েরা বাঙালির মাথা উঁচু করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, মেয়েদের এই অর্জন পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে। অনুপ্রাণিত করবে। জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান মুঠোফোনে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, সাফ জয় করে মেয়েরা জাতির জন্য অনন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। এ জন্য তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মেয়েদের এই বিজয়ে মনে হচ্ছে আমি নিজেই জয়ী হয়েছি। তাঁদের জয়ের ছোঁয়া আমি পেয়েছি। সাফ জয়ের খুশির রেশ ও আনন্দ সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে।’
এ সময় আগামী দিনেও সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে ভক্তদের উদ্দেশে ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, ‘আমরা গর্বিত। খুব ভালো লাগছে, আনন্দ লাগছে। আজ খুশির দিন। সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা পাশে ছিলেন; ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন। আপনাদের সীমাহীন সমর্থন আগামী দিনেও আমাদের মনোবল দৃঢ় করবে।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়েরা আমাদের গর্বিত ও সম্মানিত করেছে। তাঁদের সাফল্যে যেন পরবর্তী প্রজন্মও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়, সে জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ন্যাশনাল টিম কমিটি ও উইমেন উইংসের সদস্য মনজুর আলম, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমরান ও নিশাত ইমরান। অনুষ্ঠানে নারী ফুটবলারদের হাতে চেক, উপহার স্মারক তুলে দেওয়া হয়। পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয় ও ফুলের মালা।