বহুজাতিক অস্ট্রেলিয়া সারা বিশ্বের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশান্তপাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ার বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূজা বা শারদোৎসব একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। এখানে বাঙালীদের অভিভাসন খুব বেশী দিনের না হলেও বিগত বছর গুলোতে তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধুমাত্র সিডনিতেই ১৯টি সংগঠন এবার দুর্গা পূজার আয়োজন করেছে। সিডনির সবচেয়ে পুরোনো সংগঠন- বাংলাদেশ সোসাইটি, পূজা ও সংস্কৃতি একদিন এবং বাংলাদেশ পূজা এসোসিয়েসন দুদিনে পূজা সমাপন করেছে। পূজার আয়োজনে বিপ্লব এনেছে বর্তমান প্রজন্মের সংগঠনঃ শঙ্খনাদ, আবাহনী ও আনন্দধারা। তারা কয়েক বছর তিথি ও বিধি মোতাবেক পাঁচ দিনব্যপী দূর্গোৎসব পালন করে আসছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েসন, উত্তোরণ, দর্পন, মর্দীনি, ভক্তমন্দির, ত্রিনয়নী, নবরূপ, আরোহন, স্বাগতম, উৎসব, রামকৃষ্ণ মিশন, ওয়েস্ট বেংগল এসোসিয়েসন, সিডনি কালীবাড়ি বিভিন্ন পরিসরে এ পূজার আয়োজন করেছে।
এবারের পূজায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক নিবর্তনের উপর প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ব্যাপারে উল্লেখিত অনেক সংগঠন বিজয়া সন্মেলনির মাধ্যমে সিডনিতে অনতিবিলম্ব একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
মা দূর্গার পূজা, দুর্গোৎসব বা শারদোৎসব নামেও পরিচিত। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভূত একটি বার্ষিক হিন্দু উৎসব যা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেবী দুর্গার প্রতি আবাহন করে ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ঢাকের বাদ্য, মন্ত্রের উচ্চারণ, অন্জলি, ধুপ, মঙ্গলদ্বীপ, নৈবেদ্য ও প্রসাদের সমাহার এই আয়োজনে। এটি সংসারের অশুভ শক্তি- মহিষাসুরের বিরুদ্ধে মা দুর্গার বিজয়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড এবং বাংলাদেশের রাজ্যগুলিতে বিশেষভাবে জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যগতভাবে পালিত হলেও সারা বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন পরিসরে এ পূজাটি আয়োজন করে আসছে।
প্রবাসে এ পূজাটি ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে আপামর বাঙালীর একটি সামাজিক উৎসবের রূপ ধারণ করে। উৎসবটি ভারতীয় ক্যালেন্ডার মাসে আশ্বিনে পালন করা হয়, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সাথে মিলে যায়। দুর্গাপূজা একটি দশ দিনের উৎসব, যার মধ্যে শেষ পাঁচটি তিথিঃ পন্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী বিশেষভাবে পালিত হয়। এই সার্বজনীন পূজাটি বাড়িতে কিংবা বড় ভেন্যুতে আয়োজন করা হয়।
এর জন্য একটি বস্তুগত অবকাঠামো, যেমনঃ একটি অস্থায়ী মঞ্চ, কাঠামোগত সজ্জা (পূজা প্যান্ডেল), প্রতিমা, আলোকসজ্জা ও সামাজিক সম্মেলনের সব আয়োজনই সম্পন্ন করতে হয়। এ আয়োজনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, কীর্তন, নাচ, গান, নাটক, গীতি নকশা সহ অন্যান্য পারফরমিং আর্টস পরিবেশিত হয়।
এ আয়োজনে আনন্দ-উৎসব, উপহার প্রদান, পারিবারিক সম্মিলন, প্রসাদ বিতরণ এবং শেষদিন মংগল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিসর্জনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রবাসে বিধি নিষেধের কারণে দেবী বিসর্জন হয়না। দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মের শাক্তধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় খোদাই করা হয়েছে।এটি বাঙালী সংস্কৃতির আরেকটি বিশাল অর্জন।