ঋণের শর্ত ঠিক করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দিনের প্রথম বৈঠক শুরু হয় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সঙ্গে। তার আগে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, একেএম সাজেদুর রহমান ও কাজী ছাইদুর রহমানকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সূচি অনুযায়ী, এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে একাধিক বৈঠক চলবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চাওয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করবে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
সফরকারী দলটি ১৫ দিনের সফরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের নীতি নির্ধারক এবং অংশীজনদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সামনে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকসহ একাধিক উপস্থাপনা তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন কর্মকর্তারা।
ঋণের শর্তসহ খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে সবশেষ দুই অর্থবছরে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার, চলতি অর্থবছর শেষে অর্থনীতির প্রাক্কলনসহ আরও কিছু বিষয় আলোচ্য সূচিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এই আলোচনায় আইএমএফ এর দশ সদস্যর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ, যিনি বাংলাদেশ মিশনেরও প্রধান।
সফরের প্রথম দিন বুধবার তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকায় আইএমএফের আলোচনা শুরু, ঋণ পেতে আশার কথা বললেন অর্থ সচিব
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসছে আইএমএফ
আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ নিয়ে ওয়াশিংটনে গভর্নরের আলোচনা
সচিবালয়ে ওই বৈঠক শেষে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আশার কথা বলেন অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এটি আইএমএফের দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ছিল। প্রথম আলোচনা হয়েছে, বৈঠক আরও হবে। আমরা ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।”
সূচি অনুযায়ী ১৫ দিনের এ সফরের চার দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করার কথা আইএমএফ প্রতিনিধি দলের। সফরের শেষ দিন ৯ নভেম্বরও গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভার সময় সাইডলাইনে আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন গভর্নর।
বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতিতে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে।
বিশেষ করে ইউক্রেইন যুদ্ধের পর থেকে এ অবস্থা প্রকট হয়েছে। এতে রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের টাকার মান রেকর্ড পরিমাণ কমিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছেও ঋণ পেতে আবেদন করা হয়েছে।
সেই ঋণের বিষয়ে সমঝোতা পৌঁছাতেই আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর।