আগামীকাল শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশালে। একই সঙ্গে রয়েছে অজানা আতঙ্কও। অনেকটা সাদামাটাভাবেই আর দশটা সমাবেশের মতো বিভিন্ন দাবিতে সরকারবিরোধী এ আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রাম দিয়ে। কিন্তু প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের বাধার কারণে যত দিন গড়িয়েছে, ততই গুরুত্ব বেড়েছে এ আন্দোলনের। কেন্দ্রের কৌশলে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি নেতাকর্মী চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতিতে একে একে ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে অন্যান্য বিভাগের চেয়ে এবার বরিশালের বিধিনিষেধ সব বিভাগকেই ছাপিয়ে গেছে। সব ধরনের গণপরিবহনের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নৌপরিবহনও। আবাসিক হোটেলে চালানো হয়েছে পুলিশি তল্লাশি। সমাবেশে আসতে বাধা, হামলা ও ফাঁকা গুলি করা হয়েছে পথে পথে। ‘সরকারি’ অবরোধে বরিশাল এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এত সব বাধা অতিক্রম করে হোটেল-মোটেল, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন ছয় জেলা থেকে আসা হাজারো নেতাকর্মী।
জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সারাদেশে নেতাকর্মী হত্যা, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামীকাল দুপুর ২টায় নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণকালের বড় সমাবেশ করার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তবে গণপরিবহন ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল আজ শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকার ঘোষণা দিলেও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শোডাউন ও আবসিক হোটেলগুলোতে পুলিশের অভিযান এবং উপজেলা শহর ও গ্রামগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা, বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযানের ঘটনায় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে অজানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল এক সপ্তাহ আগেই। সেই সব আশঙ্কাই এখন সত্যি হতে চলছে। গতকাল থেকে সর্বত্র এক ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। গণপরিবহন বন্ধ ও নৌপথে বিধিনিষেধ থাকায় দেখা দিয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে বরিশাল-ভোলা রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রেখে দ্বীপজেলা ভোলার সঙ্গে বরিশালের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে অভ্যন্তরীণ সব রুটের লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকরা গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।
বরিশাল জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম নান্টু জানান, রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শুক্র ও শনিবার তাঁরা মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া দিচ্ছেন না। ফলে অঘোষিতভাবে আজ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচলও।
তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেত্রী ডা. মণীষা চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, একটি সংগঠন রাজনৈতিক স্বার্থে তিন চাকার যানবাহন ধর্মঘট আহ্বান করেছে। এ ধর্মঘটের সঙ্গে শ্রমিক-স্বার্থ জড়িত নেই। তাই চালকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা ধর্মঘটে যাবেন না। কিন্তু সরকার সমর্থিত লোকজন বিভিন্ন গ্যারেজে গিয়ে শুক্র ও শনিবার গাড়ি না চালানোর জন্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
তবে এত বাধাবিপত্তির পরও বিএনপি নেতাদের দাবি, গণসমাবেশে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রান্তিক পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকর্মী-সমর্থক এরই মধ্যে বরিশালে পৌঁছে গেছেন। কেন্দ্রের প্রায় ২০ জন হেভিওয়েট নেতা বরিশালে অবস্থান করছেন। প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ঘরোয়া সভা এবং সমাবেশ মাঠ বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গিয়ে মঞ্চ তৈরির সর্বশেষ প্রস্তুতি তদারকি করছেন তাঁরা।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, গণসমাবেশ ঘিরে শাসক দলের চাপ আছে, হুমকি আছে, তবুও সমাবেশ মাঠে শনিবার মানুষের ঢল নামবে। আমরা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু নগরীতে আওয়ামী লীগ মিছিল ও মহড়া দিয়ে চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এসব করে লাভ হবে না। আমাদের গণসমাবেশ সফল হবেই।
বরিশালে গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, শাসক দলের বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে বেলস পার্কে মানুষ আসতে শুরু করেছে। বুধবার রাতে ভোলা লঞ্চঘাটে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা ফাঁকা গুলি করেছে। কিন্তু আমরা যে কোনো উপায়ে শনিবারের গণসমাবেশ মহাসমাবেশে পরিণত করব।
পথে পথে হামলা :ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, বুধবার রাত ৯টায় ভোলা থেকে বিএনপির প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে ট্রলারে বরিশাল রওনা হন। এ খবর পেয়ে সেখানে আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। তারা আওলাদ নামে একটি লঞ্চ ভাঙচুর করে। হামলার সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। হামলায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতারা।
পুলিশি অভিযান :বরিশালের হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল গাফফার তালুকদার জানান, বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে এবং যুবদল সভাপতি সালাউদ্দিন রিপন, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান সজল ও বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন দপ্তরির বাড়িসহ প্রায় ১৫-২০ নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ ফারুক, তালিমুল ইসলাম পলাশসহ ১৫-২০ জন নেতার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন জানান, বুধবার রাতে নাজিরপুরের দীর্ঘা ইউনিয়নে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হানা দেয়। দীর্ঘা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্বরূপকাঠি, কাউখালী ও মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মীর বাড়িতেও পুলিশ হানা দিয়েছে।
এদিকে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সুলতান আহমেদ খান অভিযোগ করেন, বুধবার রাতে অন্তত অর্ধশত বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়ি গিয়ে পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়েছে। গত বুধবার বিকেলে বরিশাল নগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
দু’দিন আগেই নগরীতে :গণসমাবেশের দু’দিন আগে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীর আগমন ও মিছিল-স্লোগানে সরগরম হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। দুপুরের পর থেকে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা এসে জমায়েত হচ্ছেন উদ্যানে। মাঠের পশ্চিম পাশে চলছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ। স্লোগানে সরকারবিরোধী বক্তব্য ও খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলা হচ্ছে। সন্ধ্যায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন। সেখানেই চলছে রান্নার আয়োজন, রাতে তাঁরা থাকবেনও সেখানে। পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে আসা যুবদল কর্মী আসাদুজ্জামান সোহাগ জানান, বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় দু’দিন আগেই বরিশালে এসেছি। কোনো হোটেল খালি না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি।
গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির দলনেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আওয়ামী লীগের অপকৌশলের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীরা পাল্টা জবাব দিতে দু’দিন আগে থেকেই মাঠে আসছেন। এখনও জনতার মূল ঢল নামেনি।
আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যা বলছে :বিএনপির বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত-সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। বরং বিএনপি সেই সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দল। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করতে কাল্পনিক সব অভিযোগ তুলে মাঠ গরম করছে বিএনপি।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেছেন, যাঁদের নামে ওয়ারেন্ট আছে, পুলিশ নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের বাড়িতে অভিযানে যাচ্ছে। বিএনপির সমাবেশ টার্গেট করে পুলিশ কারও বাড়িতে যায়নি।
বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সমাবেশের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে তাহলে পুলিশের তরফ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি করতে চাইলে নগর পুলিশ সব অপচেষ্টা প্রতিরোধ করবে।
বরগুনায় রাতে বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি :বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বরগুনা বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপ। সড়কে ইজিবাইক, নছিমন, টমটম, থ্রি-হুইলার, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘট বলে জানান জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. ছগির হোসেন।
পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে বরগুনা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাইক্রোবাসে বরিশালের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লাসহ কয়েক নেতাকর্মীকে। এ সময় তিনি বলেন, বুধবার রাতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। আমরা বরিশালে যাওয়ার জন্য ১০টি বাস ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু বাস মালিকরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাদের টাকা ফেরত দিয়েছেন।
পটুয়াখালীতে পথে পথে বাধা ও হামলার অভিযোগ :পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গণসমাবেশে যোগ দিতে পটুয়াখালীর বিএনপি নেতাকর্মীরা বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেলে বরিশালের দিকে ছুটছেন। কোনো ধরনের বাধা ও ঝামেলা এড়াতে কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে যাচ্ছেন। আজ থেকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দু’দিন আগেই বরিশালে যাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাহনে ৮ থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মী বরিশালে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান টোটন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ সময় পথে পথে গাড়ি থামিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের দেড়-দুই হাজার নেতাকর্মী বরিশালে যেতে পারেননি। এ ছাড়া বরিশালে যাওয়ার পথে মহাসড়কের বোয়ালিয়া এলাকায় জেলা কৃষক দলের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান টিটোসহ দলের তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
সফল করতে ঝালকাঠিতে নীরব কৌশল :ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, বিএনপির গণসমাবেশ সফল করতে ঝালকাঠি জেলা বিএনপি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। বিভাগীয় শহর বরিশালের সবচেয়ে নিকটতম জেলা ঝালকাঠি হলেও এখানে বিএনপির প্রস্তুতি টের পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখন পর্যন্ত তেমন কোনো বাধার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নেতৃবৃন্দের দাবি, এরই মধ্যে ঝালকাঠির প্রচুর নেতাকর্মী বরিশাল শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি চলছে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক প্রস্তুতি সভা এবং লিফলেট বিতরণ। এ জেলা থেকে ২৫ হাজার নেতাকর্মী গণসমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানান নেতারা।
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের টার্গেট যে কোনো মূল্যে সেখানে গিয়ে গণসমাবেশ সফল করা। সরকারের সমর্থনে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা নীরবে প্রস্তুতি সভা করে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে সমর্থ হয়েছি।
রিজার্ভ লঞ্চ ও ট্রলারে ভোলার দ্বীপজেলার নেতাকর্মীরা :ভোলা প্রতিনিধি জানান, বরিশালে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে দ্বীপজেলা ভোলায়ও। পূর্বঘোষিত সময়ের এক দিন আগেই ভোলা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চের পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখায় বিভাগীয় শহর বরিশালের সঙ্গে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ভোলার। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই রুটে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীরা। এদিকে, নৌযান চলাচল বন্ধ হলেও ট্রলার, রিজার্ভ লঞ্চসহ বিভিন্ন উপায়ে বরিশাল গেছেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সহিংস ঘটনার পর বুধবার রাতে রিজার্ভ লঞ্চে অনেকটা গোপনেই প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মী বরিশাল গেছেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর জানান, বুধবার রাতে লঞ্চে যাওয়ার সময় হামলায় তাঁদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন গুরুতর। ভোলা থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী বরিশালের সমাবেশে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীব জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। জেলা বিএনপির সভাপতি নিজেই লঞ্চ মালিক। লঞ্চ চলাচল কেন বন্ধ রেখেছেন, তা তিনিই ভালো জানেন।
পিরোজপুর থেকে যাচ্ছেন ১৫ হাজার নেতাকর্মী :পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, বরিশালের গণসমাবেশে পিরোজপুর থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। পিরোজপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বরিশালের সমাবেশে উপস্থিত হবেন বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, বাস, লঞ্চসহ অন্য সব পরিবহন বন্ধ করে দিলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা নানা কৌশল নিয়ে বরিশালের গণসমাবেশে উপস্থিত হবেন। গণসমাবেশে যেতে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে।