ঢাকা: জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের লাইব্রেরিটি বর্তমানে এরশাদ ট্রাস্টের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরশাদ বেঁচে থাকতে লাইব্রেরিটি ট্রাস্টের কাজে ব্যবহারের জন্য লিখে দেন। ওই অফিসেই এরশাদ ট্রাস্টের দলিল দস্তাবেজ, রেজুলেশনসহ অন্যান্য নথিপত্র রাখা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেইসব নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে।
সে কারণে এবার এরশাদপুত্র এরিকের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন এরশাদ ট্রাস্টের বোর্ড পরিচালকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাস্টের সুবিধাভোগী এরিকের নিরাপত্তায় এবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। যদিও এর আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার (৭ নভেম্বর) এরশাদ ট্রাস্টের নথিপত্র গায়েবের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানোর পাশাপাশি এরিকের নিরাপত্তার বিষয়টিও ফের অবহিত করা হয়। এদিকে, এরিকের নিরাপত্তায় এখন সারাসরি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়েছেন এরশাদ ট্রাস্টের সদস্য অ্যাডভোকেট রুবায়েত।
জানা গেছে, সোমবার এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ, অ্যাডভোকেট রুবায়েতসহ অন্যান্য সদস্যরা অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা দলিল-দস্তাবেজ ও রেজুলেশনসহ অন্যান্য নথিপত্র খুঁজে পাননি। অফিস থেকে সবকিছু গায়েব হয়ে গেছে। পরে ট্রাস্ট অফিসের কর্মকর্তা জেমস্ অরবিন্দু হালদারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, নথিপত্র কোথায়?- তিনি এর সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি। বিষয়টি তৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানায় অবহিত করা হয়েছে।
জেমস্ অরবিন্দু হালদার বিদিশার নিয়োগপ্রাপ্ত। সেই হিসেবে ট্রাস্টের যাবতীয় কাগজপত্র গায়েব হওয়ায় সন্দেহের তীর এখন বিদিশার দিকে। কাজী মামুনকে ফাঁসানোর জন্য এরশাদ পরিবারের কারও ইঙ্গিতে এই নথিপত্র গায়েব করা হয়েছে বলে একটি সূত্রের দাবি। কারণ রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ।
এ বিষয় জানতে ট্রাস্টেরর চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে অ্যাডভোকেট রুবায়েত সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রাস্টের নথিপত্রগুলো পাওয়া না গেলে খুব ক্ষতি হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা বিষটি থানায় অবহিত করেছি। গায়েব হওয়া কাগজপত্র না পেলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাস্টের সুবিধাভোগী একমাত্র এরিক এরশাদ। এরিকের চাহিদা অনুযায়ী ট্রাস্টের বোর্ড বৈঠক করে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেয়।’
রুবায়েত বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদসহ আমরা কয়েকজন এরিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিদিশা এরিকের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। বরং তিনি আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এতে আমাদের সন্দেহ বেড়েছে।’
অ্যাডভোকেট রুবায়েত জানান, ‘বিদিশা এরশাদ ট্রাস্টের সদস্য নন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের মেমোরেন্ডামে স্পষ্ট লিখে গেছেন, এই ট্রাস্টের ওপর এরিকের মা বিদিশার কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্টপার্কের এই বাসায় প্রবেশ করতে পারবেন না। যদিও পরবর্তী সময়ে বোর্ড সভায় এরিকের সবদিক ভেবে-চিন্তে মানবিক কারণে বিদিশাকে এরিকের সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি এমন যে, বিদিশাকে প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের করে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া লাগতে পারে। কারণ এরিকের বয়স এখন ২২ বছর। তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। প্রয়োজনে এরিকের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে, বিদিশার নেতৃত্বে পুনর্গঠিত জাতীয় পার্টি পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে নিজেকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করায় বিদিশাকে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদেয় সব পদ-পদবি বিলুপ্ত ঘোয়ণা করে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে হুঁশিয়ারি করে দেওয়া হয়েছে।
এ সব বিষয় নিয়ে বিদিশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এরিককে নিয়ে ওমরা করতে যাব। কিন্তু কাজী মামুন যেতে দেবেন না। আমি আর এরিক যাতে ওমরা করতে যেতে না পারি সেজন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে জিডিও করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এরশাদ ট্রাস্টের কাগজপত্র কাজী মামুনের কাছে। তিনি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। ট্রাস্টের সব হিসাব-নিকাশ তাকেই দিতে হবে। আর ট্রাস্ট্রের নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার তানভীর ইকবাল। কাজী মামুন ট্রাস্ট্রের কেউ নন।’
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট রুবায়েত বলেন, ‘বিদিশা ওমরা করতে যাওয়ার আগে কাজী মামুনসহ অন্যান্য সদস্যরা প্রেসিডেন্ট পার্কে যান। এ সময় কাজী মামুনকে আলাদা ডেকে নিয়ে এরিক জানান, তিনি ওমরা করতে যেতে ইচ্ছুক নন। পরে বিষয়টি নিয়ে কাজী মামুন ট্রাস্টের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে বোর্ড সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদিশাকে জানানো হয়, এরিককে ওমরায় নিতে হলে ট্রাস্ট্রের একজন সদস্যকে সঙ্গে নিতে হবে। কারণ এরিকের নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদিশা সবসময় মিথ্যা কথা বলেন। ট্রাস্ট্রের নতুন চেয়ারম্যান মনোনীত করতে হলে বোর্ডের সভায় করতে হবে। যিনি চেয়ারম্যান মনোনীত হবেন তাকে অবশ্যই ট্রাস্টের সদস্য হতে হবে। কিন্তু তানভীর ইকবার ট্রাস্টের সদস্যই নন।’