ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত ছয় মাসে তিনটি বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘাতে বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অনেকটা একপক্ষীয়ভাবেই পিটিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। এর মধ্যে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে দুই দফায় আর গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদকে এক দফা পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এসব ঘটনা ক্যাম্পাসে ‘গণপিটুনির’ সংস্কৃতি তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সামনে এই অপসংস্কৃতির লালন-পালন হয়ে চললেও এসব প্রতিরোধে নীরব ভূমিকায় তারা।
গত ছয় মাসে তিনটি বড় সংঘাতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন উপাচার্য। তবে শেষ পর্যন্ত ওই প্রতিবেদন জমা পড়েনি। অন্য একটি ঘটনায় কোনো প্রতিবেদনও চাওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় উল্টো ভুক্তভোগীদেরই দোষারোপ করতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে। এসব ঘটনায় পরে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে।
গত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতি ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থান নতুন এক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। এই সংস্কৃতির চিরচেনা রূপ হলো—লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, লোহার পাইপ, রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবলসহ অবস্থান এবং বিরোধীদের ওপর বেপরোয়া হামলা। ছাত্রদল আগে থেকেই ছাত্রলীগের এই সংস্কৃতির ভুক্তভোগী ছিল। এখন নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান ও হামলার ঘটনা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করছে।
ছাত্রলীগের আন্ডারে হলে থাকি। বড় ভাইদের নির্দেশে মারামারিসহ যেকোনো প্রোগ্রামেই অংশ নিতে হয়। কেউ মারামারিতে না গেলে পরে গেস্টরুমে গালিগালাজ করা হয় ও শাস্তি পেতে হয়।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক ছাত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১৩টি আবাসিক হল মূলত ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রলীগই সেখানে ‘আসল প্রশাসন’। এসব হলে থাকা শিক্ষার্থীদের (বিশেষ করে কনিষ্ঠ শিক্ষার্থী) বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্ন সংঘাতের ঘটনায় অংশ নিতে হচ্ছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের দ্বিতীয় বর্ষের এক আবাসিক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের আন্ডারে হলে থাকি। বড় ভাইদের নির্দেশে মারামারিসহ যেকোনো প্রোগ্রামেই অংশ নিতে হয়। কেউ মারামারিতে না গেলে পরে গেস্টরুমে গালিগালাজ করা হয় ও শাস্তি পেতে হয়।’