রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ধুঁকছে জার্মানির বেশ কয়েকটি তেল পরিশোধনাগার। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির তিনটি অঞ্চলে রাশিয়ান তেলনির্ভর ৩টি শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নিল জার্মানি। দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ জানান, রাশিয়ার কোনো কিছুর ওপরই জার্মানি আর আস্থা রাখবে না।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর জার্মানি ও পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে একরকম বন্ধ হয়ে গেছে জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গের পিসিকে শোয়েড, বাডেন ভুর্টেমবার্গের কার্লসরুহের মিরো ও বায়ার্নের ভহবুর্গের বায়ার্ন অয়েলের মতো ৩টি বড় তেল পরিশোধনাগার প্রতিষ্ঠান।
আসন্ন শীত মৌসুমে জ্বালানির জোগান দেয়া ও কর্মীদের জীবিকার কথা ভেবে দেশটিতে থাকা রুশ মালিকানাধীন তিনটি তেল শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কথা জানায় শলজ প্রশাসন। চলমান জ্বালানি সংকট নিরসন ও প্রতিষ্ঠান ৩টির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় জার্মান সরকার।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জ্বালানি শক্তির সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শলজ জানান, আগামীতে রাশিয়া যাতে তেলকে জার্মানির বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে জন্যই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘রোজনেফট ডয়েচল্যান্ড প্রতিষ্ঠানটি জার্মান ফেডারেল নেটওয়ার্ক থেকে পরিচালিত হবে। এর মাধ্যমে জ্বালানি শক্তির সংকট থেকে দেশ রক্ষা পাবে। রাশিয়া আর আমাদের জ্বালানি শক্তির জোগানদাতা নয়। আমাদের আগেই ধারণা ছিল, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার কারণে আমাদের জ্বালানি সংকট দেখা দেবে। যার কারণে এ সিদ্ধান্ত। শোয়েড তেল পরিশোধনাগার চালু থাকবে এবং এখান থেকেই নিয়মিত তেল সরবরাহ করা হবে।’
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: উভয় চাপে জার্মানি
এদিন জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, রোজনেফট ডয়েচল্যান্ড জিএমবিএইচ এবং আরএন রিফাইনিং অ্যান্ড মার্কেটিং জিএমবিএইচ-কে যে কোনো মূল্যে জার্মানির ফেডারেল নেটওয়ার্ক এনার্জি প্রশাসনের অধীনে রাখা হবে।
তেল আমদানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান রোজনেফট রাশিয়া থেকে প্রতি মাসে কয়েক মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। নিয়ন্ত্রণে নেয়া ৩টি প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে জার্মানির চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ তেল পরিশোধন ক্ষমতা। রোজনেফট জানায়, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে আগামী ছয় মাসের জন্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে জার্মানির।
যদিও এর আগে রোজনেফট এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প ছিল না। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যত পরিস্থিতির কথা চিন্তা না করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল জার্মানিসহ ইইউর ‘অপরিপক্বতা’।