কর্মকর্তা-কর্মচারী আর আনসার বাহিনী মিলে জামালপুর পাসপোর্ট অফিসের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দালালের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও পাসপোর্টের আবেদন নিচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে সহকারী পরিচালকের নামে নেয়া হচ্ছে পাসপোর্টপ্রতি এক হাজার টাকা।
তবে এসব অভিযোগই অস্বীকার করেছন সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব। তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা নেই না। অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আমার নামে কোনো টাকা নিয়ে থাকলে এমন একজনকে আমার সামনে নিয়ে আসেন।
একাধিক আবেদনকারীরা জানান, জামালপুরে সহজে পাসপোর্ট পেতে দালাল ধরতে বাধ্য হচ্ছি। দালালের মাধ্যমে আবেদন জমা দিলে ‘বিশেষ চিহ্ন’ পড়ে। এতে দ্রুত ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি তোলা ও পাসপোর্ট পাওয়া যায়। এ জন্য দালালরা চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি নিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের এক দালাল বলেন, ‘সহকারী পরিচালক যোগদান করার পর থেকে কৌশল অবলম্বন করে আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে। তবে আবেদন যেভাবেই জমা হোক না কেন তার জন্য দিতে হয় প্রতি আবেদনে এক হাজার টাকা। আবার বাড়তি টাকা নিয়ে আনসার ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবেদন জমা নেন। অতিরিক্ত টাকায় জমা পড়া আবেদনে অফিস সহায়ক আতিক মিয়া একটি বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করেন। তার চিহ্ন ছাড়া কোনো আবেদন সহজে জমা বা কার্যক্রম শুরু হয় না। আবেদনের চিহ্ন দেখে সহকারী পরিচালক প্রতিটি আবেদনের জন্য এক হাজার টাকা নিয়ে থাকেন বলে জানান।’
প্রতিটি আবেদনে এক হাজার টাকা নেয়া এবং অফিসের আনসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব বলেন, বিশেষ চিহ্ন বা দালালদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট করছেন এ অফিসে এসব হয় না। এখানে কোনো টাকা নেয়া হয় না।
আবেদনে বিশেষ চিহ্ন ব্যবহারের বিষয়ে কথা বলতে অফিস সহায়ক আতিক মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সাধারণ ও জরুরি এই দুই ধরনের পাসপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে। পাঁচ বছরমেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৪ হাজার ২৫ এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ব্যাংকে ফি জমা দিতে হয়। সেই ব্যাংকের টাকা জমা রসিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর আবেদনকারীর ছবি তোলা হয়। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট দেয়া হয়।
জামালপুর পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। মুজাহিদুর রহমান বলেন, পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম ভীষণ রকমের প্রশ্নবিদ্ধ এবং সেবাবিরোধী। গ্রাহক হয়রানিতেই তারা বেশি পারদর্শী। এখানে ডিউটি করা আনসার সদস্যদের আচরণ বিভিন্ন সিনেমার ভিলেনদের মতো। সিটিজেন চার্টার প্রদর্শনসহ গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা উচিত।
সেবাগ্রহীতা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বর্তমান সহকারী পরিচালক জামালপুরে আসার পর পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তথ্যের জন্য ফোন করলে ধরে না এবং ম্যাসেজ পাঠালে উত্তর পাই না। আমরা এমন আনসোশ্যাল এবং এড়িয়ে চলা অফিসার জামালপুরে চাই না।
মেহেদী হাসান নামে আরেকজন বলেন, পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থানীয়ভাবে ৪টি দালাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট ছাড়া ভুলেও পাসপোর্ট মেলে না।
জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব বলেন, কার্যালয়ে ভেতরে কোনো দালাল প্রবেশ করতে পারে না। অফিসের বাইরে কে কী করবে, সেটা দেখার দায়িত্ব বা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আমাকে সরকার দেয়নি। এই অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা নিয়ে পাসপোর্ট করে দেয় না বলেও জানান তিনি।