মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কাইচাইল ও কান্দাপাড়ায় ধলেশ্বরীর শাখা নদীতে আকস্মিক ভাঙনে বহু পরিবার গৃহহারা। বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। টঙ্গীবাড়ির ইউএনও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। প্রশাসন ও পাউবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে পাউবি প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, কাইচাইল গ্রামের পাশে ধলেশ্বরীর শাখা নদীটির পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট। তারা ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ফেলার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। কিন্তু মাঝখানে এত বেশি গভীর যে, বালুর বস্তা ফেললেও তা গভীর গর্তে চলে যাবে। তাই পর্যবেক্ষণ চলছে।
এদিকে, পদ্মার ভাঙনে কাইচাইল ও কান্দাপাড়ায় সর্বস্বান্ত বহু পরিবার। পঞ্চান্ন বছরের তাসলিমা বেগম ঠিকানা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে। পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে স্বামীহারা তাছলিমা দিশেহারা। চোখের জল আর নদীর জলে একাকার। একই অবস্থা জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিবারেরও, তার চার শতাংশ জমির ওপরের বাড়ি ভাঙনে বিলীন। গত আটদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় বসবাস করছে পরিবার নিয়ে। আশপাশের বাড়ি থেকে দুমুঠো খাবার দিলে খেতে পারে তারা, না হয় অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।
এই অবস্থা শুধু এই দুই পরিবারের নয়। উল্লেখিত দুই গ্রামের শতাধিক পরিবারের চোখেমুখে শঙ্কা। বসতভিটা হারানোর বেদনা, পেটে অন্ন-যন্ত্রণা। পরিবারের শিশু ও বয়স্করা আরও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
ধলেশ্বরীর শাখা নদীর আকস্মিক ভাঙনে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে গ্রাম দুটি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তালতলা-ডহরী নৌপথে এ পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলন আর বেপরোয়া বালুবাহী বাল্কহেড জাহাজ চলাচলের কারণেই এ ভাঙন চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম দুটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা ও ধলেশ্বরীর সংযোগকারী তালতলা-গৌরগঞ্জ নৌপথে তীব্র স্রোত বয়ে যাচ্ছে। স্রোতের মধ্যেই চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। স্রোত আর বাল্কহেডে উৎপন্ন ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। এরইমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তালতলা-গৌরগঞ্জ ছোট নদীতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ডহরী তথা গৌরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদী হতে পাশের টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদিখান উপজেলা হয়ে উপজেলার তালতলা এলাকার ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও এটি মরা খালের মতো ছিল। কিন্তু অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে এ খাল থেকে মাটি কাটায় এবং খাল দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ খালের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। গত বছর টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলিমপুরের বেশকিছু বসতভিটা এই খালে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর শিলিমপুরের পাশের গ্রাম কাইচাইলে ভাঙন চলছে।
এলাকবাসীর অভিযোগ, খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন আর অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত একমাসে কাইচাইল গ্রামের মনির হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, ইমরান খান, মোতালেব বেপারী, শাহালম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, হাসমত আলী বেপারী, খালেক শেখ, বারেক শেখ, আব্দুল মালেক শেখ, সানাউল্লাহ বেপারী, আহসান উল্লাহ বেপারী, জসিম বেপারীসহ অন্তত ৩৩টি বসতভিটা ওই খালে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নবী হোসেন বলেন, খালের ওই পাড়ে সম্রাট কোল্ডস্টোর। সম্রাট কোল্ডস্টোরের মালিক ড্রেজার বসিয়ে এ পাড়ের খালের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। ফলে এপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসহায় মানুষের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। এমন মানুষ আছে যাদের আর ঘর উঠানোর মতো একশতাংশ জমিও নাই। আমি সরকারে কাছে তাদের জন্য সাহায্যের প্রার্থনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু. রাশেদুজ্জামান জানান, আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গত ৭ দিনের এই ভাঙনে ৩৩ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে শতাধিক পরিবার। অবশ্য গৃহহারা পরিবারগুলোকে সরকার সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটা লিস্ট পেয়েছি। ভাঙন এখনও চলমান। সরকারিভাবে নদী ভাঙন কবলিতদের যে ধরনের সহায়তা পাওয়ার কথা তার সব ব্যবস্থাই আমরা করবো।