দেশের নামীদামি ৩২টি কোম্পানিতে এখন মশার কয়েল তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করেন খাদিজা ইসলাম। চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়া খাদিজার প্রতিষ্ঠানে এখন দুই শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতি মাসে এসব কর্মীর বেতনবাবদ খরচ হয় ২৬ লাখ টাকা। মাসে ব্যবসা গড়ে দুই কোটি টাকার।
অথচ খাদিজার জীবনের শুরুটা মোটেই স্বস্তির ছিল না। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন এক পরিবারে জন্ম তাঁর। অভাবের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। তাই জীবনসংগ্রামে নামা ছাড়া খাদিজার আর কোনো উপায় ছিল না।
তাই শুরুতে স্থানীয় একটি কোম্পানিতে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। কিন্তু সেই চাকরিতে খুব বেশি দিন থাকা হলো না তাঁর। প্রত্যাশিত পদোন্নতি না পেয়ে বিক্রয়কর্মীর চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করার উদ্যোগ নেন। আর মনে মনে ব্যবসার ধারণা বা আইডিয়া খুঁজতে থাকেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালে যশোরে অনুষ্ঠিত হয় কৃষি মেলা। ওই মেলায় এসিআই কোম্পানির প্যাভিলিয়নে গিয়ে ব্যবসার নতুন এক ধারণা পান খাদিজা। এসিআইয়ের এক কর্মকর্তা মশার কয়েল তৈরির কাঁচামাল নারিকেলের মালার গুঁড়া (কোকোনাট পাউডার) তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেন খাদিজাকে। পাশাপাশি তিনি যদি নারিকেলের গুঁড়া তৈরি করেন, তা কেনারও প্রতিশ্রুতি দেন ওই কর্মকর্তা। এরপর স্থানীয় বিভিন্ন কারখানা ঘুরে নারিকেলের মালার গুঁড়া কিনতে শুরু করেন খাদিজা। সেই গুঁড়া তিনি এসিআইয়ে সরবরাহ শুরু করেন।
কিন্তু কাঁচামাল সরবরাহ করতে গিয়ে পড়েন অর্থসংকটে। কারণ, এক ট্রাক কাঁচামাল সরবরাহের মতো টাকা তাঁর কাছে ছিল না। খাদিজার কাছে তখন নিজের জমানো টাকা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার। কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রিম নেন আড়াই লাখ টাকা। ওই টাকা দিয়েই ব্যবসার শুরু। ব্যবসা শুরুর প্রথম তিন মাস অন্য কারখানা থেকে নারিকেলের মালার গুঁড়া সংগ্রহ করে এসিআইতে সরবরাহ করেন।
এরপর নিজেই বাগেরহাটে নারিকেলের একটি কারখানা স্থাপন করেন। ব্যবসা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। দুই বছর পর যশোর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় আরেকটি কারখানা স্থাপন করেন। এরপর থেকে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাগেরহাট ও খুলনায় আরও দুটি কারখানা স্থাপন করেন। খুলনার কারখানাটির উৎপাদন শুরু হবে আগামী মাসে। সব মিলিয়ে খাদিজার কারখানার সংখ্যা এখন ৪।
সম্প্রতি যশোরের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা নারিকেলের মালা থেকে গুঁড়া তৈরির কাজ করছেন। খাদিজা নতুন শ্রমিকদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কারখানার সঙ্গেই লাগোয়া খাদিজার কার্যালয়। সেখানে বসেই তিনি হিসাব-নিকাশ দেখভাল করেন। ওই কার্যালয়ে বসেই জীবনসংগ্রামের গল্প শোনান খাদিজা ইসলাম।
খাদিজা ইসলাম বলেন, ‘আমার ব্যবসার শুরুটা একদমই মসৃণ ছিল না। শুরুতে কাউকে পাশে পাইনি। ব্যবসা করব এটা পরিবারের কেউ পছন্দ করেননি। এমনকি স্বামীও প্রথম দিকে কোনো সহযোগিতা করেননি। ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও কোনো ঋণ মেলেনি। পরে অবশ্য আইডিএলসি ফাইন্যান্স তাঁকে ঋণ দেয়।’
উদ্যোক্তা খাদিজা ইসলাম এখন মাসে কর্মীদের বেতন, অন্যান্য খরচ বাদ দেওয়ার পরও কয়েক লাখ টাকা মুনাফা থাকে তাঁর।
খাদিজা বলেন, চেষ্টা ও ইচ্ছে থাকলে সফল হওয়া যায় যেকোনো সংগ্রামে। তবে ব্যবসার শুরুতে যদি ব্যাংকের কাছ থেকে সহজে ঋণ পাওয়া যায়, তাহলে উদ্যোক্তাদের সংগ্রামের পথ কিছুটা হলেও মসৃণ হবে।