তথ্যকেন্দ্র থেকে ৩০ জন নিখোঁজের তালিকা করার কথা জানানো হয়েছে।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে শুভ মহালয়া উদযাপনে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের নৌকা ডুবির পর নারী-শিশুসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে; নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৩০ জন।
রোববার দুপুরে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নৌকা ডুবির পর যাত্রীদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে একটি তথ্যকেন্দ্র বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পঞ্চগড় স্টেশনের সহকারী উপ-পরিচালক শেখ মাহবুবুল ইসলাম রাত ৭টা ৪০ মিনিট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা ২৪টি লাশ উদ্ধার করেছি। আমাদের ডুবুরি দলের সদস্যরা উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে।”
“আর তথ্যকেন্দ্র থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, স্বজনদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে।”
নিহতদের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে ১২ জন নারী, আটজন শিশু ও চারজন পুরুষ। এর মধ্যে ১৬ জনের লাশ নদীর পাড়ে এবং বাকি আটজনের লাশ বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।
বোদা থানার ওসি সুজয় বলেন, “হতাহতরা সবাই শুভ মহালয়া উপলক্ষে বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। মন্দিরে যেতে হলে করতোয়া নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতিবছরই অনেক বড় অনুষ্ঠান হয়। আশপাশের প্রায় সব জেলা থেকে প্রচুর পূর্ণার্থীরা আসেন।”
“গত দুদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উজানের ঢলে নদীর পানি বেড়ে গেছে। আর নৌকাটি ডুবেছে মাঝ নদী বরাবর। এতেই প্রাণহানীর সংখ্যা বেড়েছে।”
ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরাও উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছে বলে জানান ওসি
।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, “হতাহতরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী ২৪টি লাশ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, লাশ শনাক্তের পর নিয়ম অনুযায়ী স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন তরুণ (২০) জানান, তিনিও ওই নৌকায় করে মন্দিরে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু নৌকায় যাত্রী অনেক বেশি ছিল। যে কারণে তিনি আর যেতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, “মাঝ নদীতে যাওয়ার পরই নৌকাটি কাত হয়ে উল্টে যায়। তখন এপারে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই নেমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস আসে।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। নৌকা ডুবির পর পার থেকে অনেকেই নৌকা নিয়ে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
নদীর পাড়ে আসা ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ জানান, তার ছেলে ও শ্যালকের স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। শ্যালক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে তার অবস্থা ভাল না।
আহতদের উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
স্বজনদের খোঁজ নিতে অনেকেই নদীর পাড়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকার্তদের আহাজারি চলছে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও।
নিহতদের মধ্যে উপজেলার রয়েছেন মাড়েয়া গ্রামের হেমন্তের মেয়ে পলি রানী (১৪), নির্মল চন্দ্রের স্ত্রী শোভা রানী, শালডাঙ্গা খালপাড়ের কার্তিকের স্ত্রী লজ্জা রানী (২৫), দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গা হাতিডোবা গ্রামের বাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপংকর (৩), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের কালীকান্তর ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), বোদার মাড়েয়া বামনপাড়ার সজিবের আড়াই বছর বয়সী ছেলে পিয়ন্ত, মহানন্দর স্ত্রী খুকি রানী (৩৫), দেবীগঞ্জের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চণ্ডী প্রসাদের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জের হাতিডোবার শিকারপুর গ্রামের রবিনের স্ত্রী তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশীধর পূজারী গ্রামের প্রয়াত ভুড়া মহনের স্ত্রী শোনেকা রানী (৬০), বোদার মাড়েয়া শিকারপুর প্রধান পাড়া গ্রামের শ্রী মণ্টুর স্ত্রী কাঞ্জুনি রানী (৫৫), পাঁচপীর জয়নন্দ্র বজয়া গ্রামের মহানন্দ মাস্টারের মা প্রমীলা (৭০), দেবীগঞ্জ তেলিপাড়া গ্রামের প্রয়াত কলিন্দ্রনাথের স্ত্রী ধনো বালা (৪৭), পাচঁপীর বংশীধর গ্রামের রথেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদিঘীর চকপাড়া গ্রামের বিলাস চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৪০), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাসনহাট গ্রামের রমেশের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদা উপজেলার বড়শশী কুমারপাড়া গ্রামের হাচান আলী (৫২), একই উপজেলার আলোকপাড়া গ্রামের রমেশের শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডোবার নারায়নের শিশু কন্যা তনুশী, পাঁচপীর মদনহার গ্রামের রতন চন্দ্রের শিশু কন্যা শ্রেয়শী।