বাংলার প্রবাহ রিপোর্ট: বেশ কিছু দিন ধরেই লাদাখ সীমান্ত নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে চীন ও ভারতের মধ্যে। সম্প্রতি মুখোমুখি সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সেনা সদস্য নিহতও হয়েছেন। এরপর থেকেই আরও সংঘাতের দিকে এগোতে থাকে পরিস্থিতি। উত্তেজনা প্রশমনে রাশিয়ায় বৈঠক করছেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরই মধ্যে ভারতের পূর্ব সীমান্তে অরুণাচলপ্রদেশ থেকে পাঁচ তরুণকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে।এমনটিই দাবি করেছে অপহৃতদের পরিবার। লাদাখ থেকে নজর ঘোরাতেই চীন এখন অরুণাচলের দিকে
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছেন অনেকে। খবর আনন্দবাজারের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কংগ্রেসের বিধায়ক নিনং এরিং জানান, আপার সুবনসিরি জেলার নাচো সেক্টরের কাছে জঙ্গলে শিকারে গিয়েছিলেন টাগিন জনজাতির ৭ তরুণ। সেখানে সেরা-৭ এলাকা থেকে চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বাহিনী পাঁচ তরুণকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে থাকা দুই যুবক কোনওভাবে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তারাই ফিরে এ খবর দেয় গ্রামবাসীদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চীনা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া তরুণদের নাম টোচ সিংকাম, প্রসাদ রিংলিং, ডোংটু এবিয়া, টানু বাকের ও গারু দিরি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে অপহৃতদের পরিবারগুলোর অনুরোধ, অবিলম্বে চীনা সেনা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে তরুণদের ছাড়িয়ে আনা হোক।
অবশ্য আপার সুবনসিরি জেলার এসপি কেনি বাগরা জানান, বিষয়টি নিয়ে পরিবার বা গ্রামের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই তরুণেরা শিকারে গিয়েছিলেন। তখনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু তাদের যে চীনা সেনাই নিয়ে গিয়েছে— তা সরকারিভাবে বলা যাচ্ছে না।
নাচো থানা জানায়, থানা থেকে ঘটনাস্থল ১৩০ কিলোমিটার দূরে। গাড়ি যত দূর যায়, তারপরও ২ দিন পায়ে হেঁটে পাহাড় পার করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পৌঁছাতে হয়। পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করলেও তিন দিনের আগে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
অপহৃতদের অন্যতম প্রসাদ রিংলিং। তার ভাই প্রশান্ত রিংলিং শিকারে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তার ভাই ছাত্র। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় মাঝেমধ্যে হাতখরচার জন্য পোর্টারের কাজ করেন। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সঙ্গে সে চীন সীমান্ত দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই খবর আসে, ভাই ও তার বন্ধুদের চীনারা নিয়ে গিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানেন না কেউ।
প্রশান্তের দাবি উড়িয়ে দিয়ে সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষবর্ধন পাণ্ডে জানান, ওই সীমান্তে কোনও সেনা গতিবিধি হয়নি। তাই পোর্টারদের সঙ্গে নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তরুণদের দলটি জঙ্গলে শিকার করতেই গিয়েছিল। জঙ্গলে সীমান্ত নির্দিষ্ট না থাকায় হয়তো তারা চীনা বাহিনীর সামনে পড়েছেন। কিছুই এখনও নিশ্চিত নয়। পরিবারের লোকও নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। সেনাবাহিনী পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে চীনা সেনা পিএলএ’র হাতে গ্রামবাসীদের ধরা পড়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। চলতি বছরেই গত ১৯ মার্চ আপার সুবনসিরি জেলার আসাপিলা সেক্টর থেকে ২১ বছরের টংলে সিনকামকে অপহরণ করেছিল চীনা সেনারা। ভারতীয় সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপে ৭ এপ্রিল তাকে মুক্ত করে পিএলএ।
সেনাবাহিনীর বক্তব্য, অপহৃতদের পরিবারকে ধৈর্য ও সংযম রাখতে হবে। তারা যদি বলেন, তরুণেরা কেউ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত তাহলে অপহৃতদের মুক্তির সম্ভাবনা কমে, অত্যাচারের আশঙ্কাও বাড়ে।
নিনং এরিং বলেন, “চিনা সেনারা বারবার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকছে, ভারতীয়দের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের অবিলম্বে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত।” তার সন্দেহ, লাদাখ থেকে নজর ঘোরাতেই হয়তো চীন এবার অরুণাচল সীমান্ত অস্থির করতে চাইছে।
চীনা অনুপ্রবেশ নিয়ে শুধু বিরোধীরা নয়, সরব শাসক দলের সাংসদ তাপির গাও-ও। তিনি দাবি করেন, সেনাবাহিনী সবই জানে। কিন্তু সত্যি বলার ক্ষমতা নেই তাদের। তাপিরের দাবি, বহু বছর ধরেই চীনা সেনা অরুণাচলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে অনুপ্রবেশ চালাচ্ছে। চীনারা ২০১৭ সালে আপার সিয়াং দিয়ে ভারতের ২০০ মিটার ভিতর পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলেছিল। ২০১৯ সালে দিবাং উপত্যকায় ১২ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত চলে এসেছিল তারা। ছাগলম সেক্টরে ডিয়োমরু নালার উপরে তারা সেতুও তৈরি করে। আনজাও, মেচুকায় সীমান্তগ্রামে চীনাদের সঙ্গে গ্রামবাসীরা প্রায়ই মুখোমুখি হয়।
বাংলার প্রবাহ/এস এম হক