যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দোদুল্যমান ভোটারদের বড় অংশকেই ক্ষেপিয়ে তুলেছে। নভেম্বরের নির্বাচনে এটাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
কিছুকাল আগেও যে আশাবাদ ছিল, তা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসায় আগামী মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের দুই কক্ষই ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সেনেটের যেসব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলোতে কয়েক মাস আগেকার জনমত জরিপেও ডেমোক্র্যাটদের ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল।
কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অতিষ্ঠ ভোটারদের বড় অংশ রিপাবলিকানদের দিকে হেলে পড়ায় এখনকার জরিপগুলো গণেশ উল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বাইডেন এবং তার অনেক মিত্র ও উপদেষ্টারা চলতি বছরের শুরুতেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের দখল ডেমোক্র্যাটরা ধরে রাখতে পারবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, অথচ এখন এই কক্ষের নিয়ন্ত্রণও রিপাবলিকানদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট হয়েছে বলে জানাচ্ছে ফাইভথার্টিএইটসহ একাধিক জনমত জরিপ বিশ্লেষক।
কংগ্রেসের কোনো একটি কিংবা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার মানে হচ্ছে বাইডেনকে তার মেয়াদের শেষ দুই বছর ব্যাপক চাপে থাকতে হবে।
তখন রিপাবলিকানরা পারিবারিক ছুটি, গর্ভপাত, পুলিশে সংস্কারসহ যেসব ইস্যুতে বাইডেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে চান সেগুলো আটকে দিতে পারবে; পাশাপাশি তারা অভিবাসন ও ব্যয় কমানোর মতো আইন প্রণয়নে চাপ বাড়াতে পারবে।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলে তারা ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় এবং প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক লেনদেন ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তদন্তে নামবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা বাইডেন, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিশংসিত করার আশায়ও বসে আছেন।
হোয়াইট হাউসের ভেতর এখন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে যে যে হিসাবনিকাশ চলছে, সে সম্বন্ধে জ্ঞাত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এখনও সেনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার ৫০-৫০ সম্ভাবনা দেখছে।
মে মাসে বাইডেন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার দলের প্রার্থীরাই কংগ্রেসের উভয় কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও সেনেটে ভালো করবেন।
কিন্তু লড়াই যে আসলে তার ধারণার চেয়েও বেশি হাড্ডাহাড্ডি হতে যাচ্ছে, তা গত সপ্তাহে তিনি স্বীকারও করে নিয়েছেন।
“কখনো তারা এগিয়ে থাকে, কথনো আমরা,” বলেন বাইডেন। তবে তার আশা, ৮ নভেম্বরের আগে আগেই দোদুল্যমান ভোটাররা আরও একবার ডেমোক্র্যাটদের দিকেই হেলে পড়বে।
হোয়াইট হাউসও প্রকাশ্যে এই আশার বার্তাই শোনাচ্ছে।
তবে তলে তলে তারা যে নির্বাচন পরবর্তীতে রিপাবলিকানরা যেসব বাধা সৃষ্টি করতে পারে বা যেসব বিষয়ে তদন্তে নামতে পারে, তার প্রস্তুতিও নিচ্ছে তা জানাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক-বর্তমান উপদেষ্টারা।
“রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রণ কেমন হবে, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সুস্পষ্ট ধারণা আছে। হাতুড়ি হাতে পেলে তারা যে কী করবে সেটা মোটেও রহস্যপূর্ণ নয়,” বলেছেন হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকা ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ এরিক শুলজ।
যে কোনো তদন্ত মোকাবেলার জন্য হোয়াইট হাউস খ্যাতনামা আইনজীবী রিচার্ড সৌবারকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে; আরও নিয়োগের বিষয়টি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলের উপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোটারদের অনেকের কাছেই ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান দুর্বল করেছে। ক্ষমতাসীনরা বিচারব্যবস্থা ও পুলিশে সংস্কারের যে কথা বলছে অনেক এলাকাতেই রিপাবলিকানরা একে অপরাধ দমনে ডেমোক্র্যাটদের নমনীয়তা হিসেবেও দেখাচ্ছে।
জুনে ও অগাস্টে বেশকিছু নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভালো ফলে মনে হচ্ছিল, ভোটাররা সম্ভবত গর্ভপাত বিরোধিতাসহ রিপাবলিকানকের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা বেশিরভাগ নীতিই প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে।
কিন্তু ধারণার চেয়েও বেশি মূল্যস্ফীতি সেই ধারণা বদলে দিচ্ছে; সাম্প্রতিক প্রায় সব জরিপই বলছে, অন্য সবকিছুর চেয়েও মূল্যস্ফীতিটাই ভোটারদের বেশি ভাবাচ্ছে।
রিপাবলিকানদের দিকে দোদুল্যমান এই ভোটারদের হেলে পড়ার বিষয়টি হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদরা স্বীকারও করে নিয়েছেন, তবে তারা এখনি হাল ছাড়তে নারাজ।