বাংলাদেশের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের তালিকা করলে প্রথম সারিতেই থাকবেন মোহাম্মদ রফিক। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রধান অস্ত্র ছিলেন বাঁ হাতি এই অফ স্পিনার। সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়েও তিনি হরহামেশাই মেটাতেন সময়ের দাবি। ২০০৯ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর চেয়েছিলেন ক্রিকেট নিয়েই বেঁচে থাকতে। কিন্তু এই কিংবদন্তির অবসরের পর ১৩ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও তার ‘মেধাকে কাজে লাগানোর কথা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন’ মনে করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুর্দিনে রফিক প্রসঙ্গ যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সময় সংবাদের প্রতিবেদক মো. ফখরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কিংবদন্তি এ ক্রিকেটারের। যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাজনীতিকরণের বিষয়টি ছাড়াও উঠে এসেছে আরও অনেক প্রসঙ্গ।
আক্ষেপের সুরে রফিক বলেন, ২০০৯ সালে রিটায়ার্ড করেছি। এখন ২০২২ চলে। এক যুগেরও বেশি সময় হয়ে গেছে অবসরে গেছি। এখনও কেউ (বিসিবি) আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করেনি।
তিনি বলেন, একজন ক্রিকেটার সবসময়ই চান, অবসরের পর ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে। নিজে যতটুকু জানেন সেটা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমি যদি দুইশ বাচ্চা নিয়ে কাজ করি, অন্তত দুইটা বাচ্চাও তো সেখান থেকে উঠে আসবে। যাকে ঘষেমেজে পরের ধাপের জন্য প্রস্তুত করা যাবে। কিন্তু সেটাতো হচ্ছে না।
দেশসেরা এ স্পিনার মনে করেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিভাগটা নিরপেক্ষভাবে থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমি যখন খেলতাম তখনো বলেছি, এখনও বলছি- বাংলাদেশের স্পোর্টসটা নিরপেক্ষ থাকতে হবে। রাজনৈতিকভাবে থাকলে হবে না। তাহলে দেখবেন এই জায়গাটা শক্তিশালী হবে।
দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ এ ক্রিকেটারের। তিনি বলেন, এখন যে নয়ছয় চলতেছে (ক্রিকেট বোর্ডে) এটা আর্মির হাতে দিলে কেউ আর সেই সাহস দেখাবে না। আর রাজনৈতিকভাবে হলে এমনভাবে সবসময় চলতেই থাকবে।
কয়েকটা উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের এখন যারা লোকাল কোচ হিসেবে আছেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন আপনি। কেউ আছে বই পড়ে এখন পুরোদস্তুর কোচ হয়ে গেছে। এছাড়া বোর্ডে থাকা আকরাম খান এবং প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে থাকা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সম্পর্কে বলেন, এই পদের জন্য তাদের কী যোগ্যতা আছে? তারা দেশের জন্য এমন কী করেছে যে এখন খেলোয়াড় বাছাই করবে? তারা নিজেরা কতটুকু খেলা বুঝে বলেও সন্দিহান রফিক।
নিজেরা যোগ্য হয়েও অবহেলিত বলে মনে করেন রফিক। বলেন, কিছু হলেই বিদেশ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে একজনকে উড়িয়ে নিয়ে আসি। অথচ দেশি যোগ্যদের দিকে নজর পড়ে না। নিজের আক্ষেপের মধ্যেও কোচদের সঙ্গে অসাদাচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। বলেন, বাংলাদেশে যারা কোচ হিসেবে আসে, প্রথমে তাদেরকে অনেক সম্মান দিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পরে তাদের বিদায়টা কিন্তু অসম্মানজনক হয়। খুব বাজেভাবে তাদের বিদায় করা হয়। এভাবে চলতে থাকলে একসময় দেখবেন কোনো ভালো কোচ খুঁজে পাবেন না।
দেশের ক্রিকেটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ রফিক মনে করেন, সেনাবাহিনীর হাতে দায়িত্ব দিলে বোর্ডের সব ‘দুই নম্বরি আর অনিয়ম’ বন্ধ হবে। তিনি বলেন, তখন একটা লোক উল্টাপাল্টা করতে গেলে চিন্তা করে করবে।
আরও বলেন, আমরা যখন খেলেছি তখনতো টাকা ছিল না। এখনতো বোর্ডের অনেক টাকা (৯শ’ কোটি টাকা এফডিআর)। তাহলে দেশের ক্রিকেটে উন্নতি হচ্ছে না কেন? এখন যেভাবে চলছে এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
বিসিবি থেকে এখনো ডাকের অপেক্ষায় আছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সেটাতো চাই। তবে না ডাকলে যে মরে যাব এমন না। হয়তো নিজে যা জানি সেটা দিয়ে যেতে পারব না সেভাবে।
আর্থিক দিক নিয়েও কথা বলেন রফিক। তিনি বলেন, আমরা যখন খেলেছি তখনতো এত টাকা ছিল না। এখন সাকিবরা যেভাবে পায়। তবুও চলে যাচ্ছে। আল্লাহ তো না খাওয়ায়ে রাখতেছে না।