রাশিয়া সম্প্রতি প্রায় ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে বোমাটিকে সুরক্ষা কবচে মুড়ে নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। জাপানের হিরোশিমার বুকে আমেরিকা ১৯৪৫ যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, ১৯৬১ সালেই তার থেকে প্রায় তিন হাজার গুণ শক্তিশালী বোমার পরীক্ষা চালিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া। এতোদিন পর সেই বিস্ফোরণের ভিডিও সামনে আনল রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি কর্পোরেশন ‘রসঅ্যাটম’।
পোক্যাটম বা রসঅ্যাটম-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২১ আগস্ট এই গোপন ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ সালের ১ ডিসেম্বর রসঅ্যাটমের প্রতিষ্ঠা করেন ভ্লাদিমির পুতিন। রাজধানী মস্কোতে এর প্রধান কার্যালয়। নাম থেকেই পরিষ্কার যে, এর কাজ-কর্ম পারমাণবিক শক্তি নিয়ে।
রসঅ্যাটমের প্রকাশ করা ৫৯ বছরের পুরনো এই ডকুমেন্টারিতে জানানো হয়েছে, ৫০ মেগাটনের এই হাইড্রোজেন বোমাটি দিয়ে উত্তর মহাসাগরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপ নোভায়া জেমলায়ায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। রুশ ভাষায় বোমাটির নাম ‘জার বোম্বা’। আর বোমাটি নিয়ে যাওয়া হয় রাশিয়ার ‘টিইউ-৯৫’ বিমানে। প্রথমে পরীক্ষাগার থেকে সেটি ট্রেন লাইন মারফত নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে সেটিকে বিমানে তোলা হয়। বোমাটি প্রায় ২৬ ফুট লম্বা এবং ২৭ টন ওজনের।
১৯৬১ সালে ৩০ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে রুশ বিমানটি থেকে প্যারাসুটে করে বোমাটি ফেলা হয় রাশিয়ার দখলে থাকা ওই ছোট্ট দ্বীপটি লক্ষ্য করে। তবে বোমাটি মাটি স্পর্শ করেনি, ভূমি থেকে প্রায় চার হাজার মিটার উপরে আকাশেই ফাটানো হয়। বিমান থেকে প্যারাসুটে করে ফেলার পর কাউন্টডাউন শুরু হয়, নির্দিষ্ট সময়ে গোটা আকাশ আলো করে বিস্ফোরিত হয় হাইড্রোজেন বোমাটি। সেই সঙ্গে তৈরি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো মেঘ, যা কয়েক কিলোমিটার উঁচু ছিল। এই গোটা ঘটনা বিমান থেকে ক্যামেরায় ধরা পড়ে। শুধু বিমান নয় আরও অন্য ক্যামেরা থেকেও ধরে রাখা হয় ঘটনাটি। কয়েকশো কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যায় সেই আলোর ঝলকানি।
আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়া- দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জার প্রতিযোগিতার ফল এই হাইড্রোজেন বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বুযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের বুকে পর পর দু’টি বোমা ফেলে, যার ভয়াবহ বিধ্বংসী ক্ষমতা দেখে গোটা মানবজাতি শিউরে উঠেছিল। জাপান এখনও সেই বিস্ফোরণের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। আর কোনও দেশ এ পর্যন্ত পরমাণু বোমার প্রয়োগ না করলেও অনেকেই তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রাশিয়ার এই হাইড্রোজেন বোমার ক্ষমতা জাপানে ফেলা বোমার থেকে তিন হাজার ৩৩৩ গুণ বেশি। এটি পাঁচ কোটি টন ট্রাই নাইট্রো টলুইনের ক্ষমতার সমান।