দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুরুতে তাঁদের বলা হয়েছিল যে জমি ইজারা নিলে এর বিপরীতে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। বাড়তি ভ্যাটের চাপে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি ইজারা দিয়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায় নিয়ে দুই বছর ধরে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে অস্বস্তিতে আছেন বলে জানান বেজার চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করলে জমি ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভ্যাট নেওয়া হবে না—এমন আশ্বাস দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানায় বেজা। সেই আশ্বাসে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০১৫-১৬ সাল থেকে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ২০২০ সালে এসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, প্রচলিত ‘নিয়ম অনুসারে’ ইজারা নেওয়া জমির মূল্যের ওপর বাড়তি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।
বেজার আওতাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য প্রায় ৫০০ একর জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কোম্পানিটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমন্বয়ক মো. ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই ভ্যাট প্রদান ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিনিয়োগেও নিরুৎসাহ বোধ করছেন।
ফয়জুর রহমান বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য বিনিয়োগকারীরা রাজস্ব বোর্ডের কাছে বেজার মাধ্যমে ও আলাদাভাবে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর দেয়নি তারা। একই ধরনের কথা জানিয়েছেন দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী।
বেজা কর্তৃক সরকারি খাসজমি বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রাপ্ত জমির উন্নয়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের ৫০ বছরের জন্য বরাদ্দ দেয়। এনবিআর বলছে, বেজার এই জমি বরাদ্দ কার্যক্রম রাজস্ব বোর্ডের সংজ্ঞা অনুসারে ‘ইজারাদার’ সেবার আওতাধীন। এ জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুসারে জমি ইজারার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।
তবে এনবিআরের এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দুই বছর ধরে ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে আসছে বেজা। সংস্থাটি বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি উন্নয়ন করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে হস্তান্তরের বিষয়টি ‘ইজারাদার’ সেবা নয়, বরং ‘ভূমি উন্নয়ন সংস্থার’ কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ভূমি উন্নয়ন সংস্থার সংজ্ঞায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেনা বা অন্য যেকোনো উপায়ে পাওয়া ভূমির উন্নয়ন করে পণের নিময়ে তা বিক্রয় বা হস্তান্তর কাজে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে বোঝানো হয়েছে। বেজা বলছে, ভূমি উন্নয়ন সংস্থার সংজ্ঞায় কোনো স্থানেই শুধু আবাসন কোম্পানি বা বেসরকারি খাতের ভূমি উন্নয়নের জন্য প্রযোজ্য, তা বলা নেই। সুতরাং বেজাও নিজেদের ভূমি উন্নয়ন সংস্থা বলে মনে করছে।
বেজা আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণের পর উন্নয়ন ব্যয়ের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মূসক দিতে হয়। একই জমির ওপর আবার ১৫ শতাংশ হারে মূসক দিলে তা দ্বৈত ভ্যাট হয়ে যায়। এটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা।