পিকে হালদারের লুটপাটের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। লুটে জড়িত মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক শাখাওয়াত ও অলোক। কেঁচো খুঁড়তে সাপ। তিন বা সাড়ে তিন হাজার নয়, প্রশান্ত কুমার বা পিকে হালদার লুটপাট করেছেন ৫ হাজার কোটির টাকারও বেশি। শুধু তিনি একা নন, ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়েছে লুটপাটের টাকা। এরই মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের দুই পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন ও অলোক কুমার দাশসহ আরো কয়েকজনের নাম পেয়েছে দুদক।
প্রশান্ত কুমার বা পিকে হালদার। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গেলো বছর বিভিন্ন নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তবে তার আগে থেকেই তিনি পলাতক।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং ফাস ফাইন্যান্স থেকেই সাড়ে তিন হাজার কোটি আর পিপলস্ লিজিং, রিলায়েন্স এবং বিআইএফসি থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সব মিলে আত্মসাত করা হয় ৫ হাজার কোটির টাকার বেশি।
দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা ৮৩ জন ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করেছি এবং সেইসব অ্যাকাউন্ট আমরা জব্দ করেছি। তাদের আত্মসাতের টাকা পর্যায়ক্রমে উদঘাটন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা সম্ভব হবে।
দুদকে পাঠানো আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউর এক প্রতিবেদনে বলা হয় পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা বের করেন তার মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের দুই পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন ও অলোক কুমার দাশ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গেছে ৩৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হকসহ ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এসময় পিকে হালদারের ভুয়া প্রতিষ্ঠান এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার তথ্য পায় সংস্থাটি।
এর মধ্যে ১৪ কোটি টাকা জমা হয় অলোক কুমার দাশ ও তার স্ত্রী অনিতা দাশের প্যারামাউন্ট অ্যাগ্রো এবং তাদের পুত্র রঞ্জন দাশের হিসাবে। ওই টাকা মেঘনা ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে জমা রাখা হয় শাখাওয়াত হোসেনের পুত্র সাদাব হোসেনের নামে।
জানা গেছে, শাখাওয়াত হোসেন ও অলোক কুমার দাশ দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বন্ধু। দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ইনস্যুরেন্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাদেও যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে ডাকা হবে।
এ ধরনের লুটপাটে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এসব দুর্নীতির সঙ্গে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকেই বিচারের আওতায় আনা উচিত। এদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এসব দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অর্থছাড়ের সব টাকা বিদেশে পাচার করতে পারেননি পিকে হালদার। পিকের আত্মীয় ছাড়াও দেশে এসব অর্থ আর কার কাছে আছে তা খোঁজা হচ্ছে।