রয়টার্স প্রতিবেদনে জানান, ফ্লোরিডার এই বাড়িতে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট অফিশিয়াল প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস সরিয়ে রেখেছেন বলে যে কথা শোনা যায় এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের তদন্তের সঙ্গে এই অভিযানের সম্ভবত সংযোগ থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ফ্লোরিডায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবনে তল্লাশি চালিয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (৮ আগস্ট) ফ্লোরিডার পাম বিচ শহরের মার-এ-লাগোতে এই অভিযান চালায় সংস্থাটি।
এদিকে নিজের বাড়িতে এফবিআইয়ের তল্লাশি অভিযানের এই তথ্য নিজেই সামনে এনেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এফবিআই এজেন্টরা সোমবার নিজের মার-এ-লাগো এস্টেটে অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এই অভিযান চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
রয়টার্স প্রতিবেদনে জানান, ফ্লোরিডার এই বাড়িতে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট অফিশিয়াল প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস সরিয়ে রেখেছেন বলে যে কথা শোনা যায় এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ের তদন্তের সঙ্গে এই অভিযানের সম্ভবত সংযোগ থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অবশ্য এই অভিযানের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এছাড়া ওয়াশিংটনে এফবিআই’র সদর দপ্তর এবং মিয়ামিতে অবস্থিত সংস্থাটির ফিল্ড অফিসও ট্রাম্পের বাড়িতে অভিযানের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত সম্পর্কে জানেন এমন দুই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ট্রাম্প নিজের সাথে করে হোয়াইট হাউস থেকে ফ্লোরিডার এই রিসোর্টে নিয়ে আসা কয়েক বাক্স নথির খোঁজ পেতেই এই তল্লাশি চালানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাম বিচের মার-এ-লাগো ‘এফবিআই এজেন্টদের একটি বড় দল দিয়ে দখল করা হয়েছে’। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী- ট্রাম্প বলছেন, মার-এ-লাগো এস্টেটটি ‘বর্তমানে অবরুদ্ধ, এটি দখল করা হয়েছে এবং অভিযান চালানো হচ্ছে’। তবে কেন সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে তা তিনি উল্লেখ করেননি।
এফবিআইয়ের অভিযান শুরুর পর ট্রাম্প বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করার এবং সহযোগিতা করার পরও আমার বাড়িতে এই অঘোষিত অভিযান চালানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তারা এমনকি কোনো অনুমতি না নিয়েই আমার বাড়িতে প্রবেশ করেছে!’
এদিকে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এফবিআইয়ের অভিযানের সময় ট্রাম্প তার এই বাড়িতে ছিলেন না। তবে এফবিআই সেখানে প্রবেশের জন্য একটি সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েছিল। এছাড়া অজ্ঞাত দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন আরও বলছে, গোপন নথি খুঁজে পেতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষের পর হোয়াইট হাউস ছেড়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচ দ্বীপের মার-এ-লাগো ভবনটিকে স্থায়ী আবাস হিসেবে ব্যবহার করছেন।
নিউইয়র্ক পোস্টসহ একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইতোপূর্বে জানিয়েছিল, সমুদ্র তীর ঘেঁষা এই বাড়িটি বরাবরই ট্রাম্পের খুব প্রিয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালনের চার বছর এই ভবনে অনেক সময় কাটিয়েছেন তিনি। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ শীতকালের প্রায় পুরো সময় এই ভবনে কাটানোর কারণে অনেকেই মার-এ-লাগোকে ‘শীতকালীন হোয়াইট হাউস’ নামও দিয়েছিলেন।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার আগে নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে সপরিবারে থাকতেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেখানকার আবাস গুটিয়ে মার-এ-লাগোতে স্থায়ীভাবে বসবাসের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছিলেন তিনি।
১৯২৭ সালে ফ্লোরিডার বিখ্যাত পোস্ট পরিবারের উত্তরসূরী মারজোরি মেরিওয়েদার পোস্ট ২০ একর জমির ওপর রাজসিক এই স্থাপনা তৈরি করিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে ১ কোটি ডলারের বিনিময়ে এটি কিনে নেন ট্রাম্প। পরে ক্লাবে রূপাান্তর করা হলেও এটিই এখন ট্রাম্পের মূল আবাসস্থল।
ফ্লোরিডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভবন হিসেবে স্বীকৃত মার-এ-লাগোতে ১২৮টি কক্ষ ছাড়াও রয়েছে ২০ হাজার বর্গফুটের একটি নাচঘর, ৫টি টেনিস কোর্ট এবং সুবৃহৎ একটি সুইমিং পুল। আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো- ভবনটি থেকে সরাসরি আটলান্টিক মহাসাগরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
১৯৮৫ সালে পুরনো এ স্থাপনাটি কেনার পর তাতে ব্যাপক সংস্কার করেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডার যে এলাকায় মার-এ- লাগোর অবস্থান, সেই হিসেবে বর্তমানে ভবনটির আর্থিক মূল্য প্রায় ১৬ কোটি ডলার বলে ২০২১ সালের শুরুতে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফোর্বস।