Sunday , December 22 2024
Breaking News

ডেঙ্গু ফের সারা দেশে ছড়াচ্ছে

গত বছরের ধারাবাহিকতায় ফের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু; গ্রামে গঞ্জে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সেভাবে তৈরি না হওয়ায় শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৯ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৪ জনই ঢাকার বাইরের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

মাঝে এক বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ সালে ফের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়ায়। তাতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে যায়, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।

আর এ বছর মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৭ জন। তাদের ৯ হাজার ৩৮৩ জন ঢাকা মহানগরের। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৬২৪ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, কেবল তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যান।

‘লোকাল ট্রান্সমিশন’

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, একটি জেলায় যদি সারাবছর পাঁচজন রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে। কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নেওয়া যাবে ডেঙ্গু স্থানীয়ভাবে ছড়িয়েছে।

আর ওই স্থানীয় সংক্রমণ নিয়েই ভয়ে আছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর যে ৪৯ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, তার মধ্যে ৩২ জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচের বেশি।

কবিরুল বাশার বলেন, “রাজধানীর বাইরে এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে ডেঙ্গুর লোকাল ট্রান্সমিশন হলে তা কিছুটা আশঙ্কার।

“আমরা শুধু সিটি করপোরেশন নিয়ে কথা বলছি। জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই রোগের জীবানুবাহী এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ, রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেই।”

ঢাকায় এইডিস মশার বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা আছে বলেই ডেঙ্গু এখনও পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

তার ভাষ্য, “তা না হলে আক্রান্ত আরও বেশি হত। অন্যান্য জেলা ডেঙ্গু মোকাবেলায় সক্ষমতা নেই বলেই সেখানে ডেঙ্গু বাড়ছে।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার ডেঙ্গু রোগীর সেবায় ব্যস্ত এক নার্স।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মঙ্গলবার ডেঙ্গু রোগীর সেবায় ব্যস্ত এক নার্স। |asif mahmud ove
এ বছর ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১২ জেলায়। কেবল নারায়ণগঞ্জে কারও ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা মহানগরেই সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ৩৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মহানগর বাদে পুরো বিভাগে এ পর্যন্ত ১৬৫ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত সাতটিতে ১ হাজার ৫৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ১০ কক্সবাজার জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনই কক্সবাজারের।

খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সবকটিতেই এবার ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এ বিভাগে ৩৫৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে যশোর ও নড়াইল জেলায়।

ঝালকাঠি জেলা বাদে বরিশাল বিভাগের সবগুলো জেলায় এ বছর ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এ পর্যন্ত যে ২৬৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৮ জন বরিশাল জেলার।

রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয়টিতে এ পর্যন্ত ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পাবনায়। এ জেলায় এ পর্যন্ত ১০৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ময়নসিংহ বিভাগের চার জেলার সবকটিতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২৪ জনের মধ্যে ১০৬ জনই ময়মনসিংহের।

রংপুর বিভাগের রংপুর, লালমনিরহাট এবং দিনাজপুর জেলায় এ পর্যন্ত ১৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সিলেট বিভাগের সিলেট এবং মৌলভীবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরে এতগুলো জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়াকে ‘বড় সমস্যা’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “একটা হল ঢাকায় এর মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ায় ওই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে তাদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেসব জেলায় নতুন করে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে যে কোনো ভেরিয়েন্টেই আক্রান্ত হবেন। ফলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি।

“ওইসব জেলায় যদি অনেক বেশি লোক আক্রান্ত হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে অনেক লোক আক্রান্ত হবে। আক্রান্ত বেশি হলে মৃত্যুও বেশি হবে।”

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী।

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী। |ফাইল ছবি
ঢাকায় ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভালো মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জেলা পর্যায়ে এই ব্যবস্থাপনা ভালো না। ফলে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হওয়া বা মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হবে।

“এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাগুলোর দক্ষতা সীমিত। ফলে ডেঙ্গু জেলা থেকে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। যে কারণে সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। জেলা আক্রান্ত হলে উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু ছড়াবে। কারণ নগরায়নের প্রভাব উপজেলা পর্যন্ত চলে গেছে।”

মন্ত্রীর আশা, গ্রামে ছড়াবে না ডেঙ্গু

এ বছর জানুয়ারি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল। খুলনা বিভাগে এ বছর প্রথম রোগী পাওয়া যায় ফেব্রুয়ারি মাসে। এপ্রিল মাসে রাজশাহী বিভাগে এবং সেপ্টেম্বরে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়।

নারায়ণগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলছেন, তার দপ্তর এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। তাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার পরিস্থিতির ‘আগের চেয়ে উন্নতি’ হয়েছে।

“ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে গেলে ঝুঁকি বাড়বে। যেসব জায়গায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে সেখানে বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকায় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। শহরের বাইরের এলাকায় হলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তবে গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই মশা কিছুটা প্রতিরোধ হয়। ফলে সেসব এলাকায় ডেঙ্গু তেমন করে ছড়াবে না মনে হয়।”

About banglar

Check Also

আ.লীগ ও সহযোগীদের কাছে লোক চেয়েছে যুবলী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published.