বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকা পরিবারের শিশু-শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতার সংকল্পে ২২ বছর আগে নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য অপ্টিমিস্ট’র অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আরো বহু সেবামূলক সংগঠনে বিবাদ-বিভক্তির রেখা বিস্তৃত হয়ে তা ইতিহাসের অতল গহবরে হারিয়ে গেলেও ‘দ্য অপ্টিমিস্ট’ সময়ের বিবর্তনে আরো পরিস্ফুট হয়েছে। প্রসারিত হয়েছে কর্মপরিধি। সততায় উদ্ভাসিত নিষ্টাবান একদল মানুষের আন্তরিক প্রয়াসে ‘দ্য অপ্টিমিস্ট’ সারা আমেরিকায় বিশেষ একটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এরই প্রকাশ ঘটলো ৯ অক্টোবর সংস্থাটির বার্ষিক তহবিল সংগ্রহের সমাবেশে। সেখানে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া তরুণ-তরুণী থেকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ প্রবাসীদের সাথে বহুজাতিক এ সমাজে নিজ যোগ্যতাগুণে বিশেষ আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী আমেরিকানরাও। সকলেই ‘দ্য অপ্টিমিস্ট’র সাথে জড়িতদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। উল্লেখ্য, দৈনিক ৩৭ সেন্ট, বার্ষিক ১৩৫ ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশী একটি শিশুকে স্পন্সর করা যায় এই সংস্থার মাধ্যমে। নিজ এলাকার প্রিয়-পরিচিতজনের মধ্যে যারা অভাবী,সে সব পরিবারের শিশুকেও এ কর্মসূচির আওতায় লেখাপড়ার সহায়তা দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ সংস্থাটি নির্ভরযোগ্য একটি অবলম্বনে ব্যবহুত হচ্ছে প্রবাসের বাস্তবতায় যারা সবসময় খোঁজ-খবর রাখতে পারেন না, তাদের হয়ে মানবতার কল্যাণকর কাজগুলো সম্পাদনে।
জাতিসংঘে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য’ অর্জনের সহায়ক হিসেবেও সংস্থাটির কর্মকাণ্ডকে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মোহিত। যুক্তরাষ্ট্রেই শুধু নয়, সারাবিশ্বে খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম এই সংস্থার কাজকর্মে অভিভূত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। স্বচ্ছতায় পরিপূর্ণ থাকলে সকল কর্মকাণ্ডের গতি কখনো স্থবিরতায় আক্রান্ত হয় না বলে মন্তব্য করেছেন সুধীজন। কম্যুনিটির সজ্জন হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকউদ্দিন চৌধুরী রানা এবং পরীক্ষিত কয়েকজনের সমন্বয়ে গঠিত এই সংস্থার বিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক সরোয়ার বি সালাম শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে না পারলেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লিখিতাকারে।
জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষা গ্রহনে পিছিয়ে থাকা ২২ জেলার বিভিন্ন স্কুলের ১১২২ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসা চ্যারিটি সংস্থাটির চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ডাইরেক্টরস, ভলেন্টিয়ার, স্পন্সরসহ কয়েক’শ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২১ বছর আগে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে অপটিমিস্ট। সংগঠনটির কাছে থেকে বৃত্তি সহায়তা পেয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা আজ বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। অনেকে পড়াশোনা শেষ করে পরিবার ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অপটিমিষ্টের এই মানবিক কার্যক্রমের প্রতি সহযোগিতা ও সমর্থন জানাতে তাই ফান্ড রেইজের অনুষ্ঠানে হাজির হন নিউইয়র্কের কয়েক’শ দাতা। তাদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবি। নিউইয়র্কের স্কুল, কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও চিত্রশিল্পীরা তাদের আঁকা ছবি দান করেন অপটিমিস্টকে। সেসব ছবি অনুষ্ঠানে নিলামে তোলা হয়। এ থেকে পাওয়া অর্থ যুক্ত করা হবে শিক্ষার্থী বৃত্তি কার্যক্রমে-তাও জানানো হয়।
সংস্থাটির ভলান্টিয়ার ফাতেমা শাহাব রুমা ও মিনহাজ শাম্মুর উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফান্ড রেইজিংয়ের ঐ অনুষ্ঠান। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। আরো বক্তব্য রাখেন অপটিমিস্টের প্রেসিডেন্ট শাহেদুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক মুক্তাদির, সেক্রেটারি জেনারেল নিশাত হকসহ কয়েকজন অতিথি।
‘দ্য অপটিমিস্ট’র মানবিক এই কার্যক্রমে শুরু থেকে অসামান্য অবদান রাখায় ‘লাইফ টাইম এচিভম্যান্ট সম্মাননা’ প্রদান করা হয় বিদায়ী সভাপতি সারওয়ার বি সালামকে। অসুস্থতার জন্য অনষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় সারওয়ার বি সালামের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। বিগত বছরগুলিতে দি অপটিমিষ্ট কর্তৃক সামগ্রিক কর্মকান্ডে অনন্য ভুমিকা রাখার জন্যে সম্মাননা দেয়া হয় বাংলাদেশে অবস্থানরত মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম সহ নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ ফাতেমা শাহাব রুমা, সমাজ সেবক আহাদ আলী সিপিএ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী পারমিতা দাশ মুমুকে।
দি অপটিমিস্টের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম কে বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নোরা আলী, প্রমোটার ও পাবলিশার সুনীল হালী প্রমুখ।
প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে উৎসাহী অনেকে ২০২২ সালের তহবিল সংগ্রহ অভিযানকে স্বার্থক ও সফল করতে এগিয়ে আসেন। এছাড়া এই অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের তরুণ ও তরুণী সহ স্কুলগামী অনেক শিক্ষার্থী আন্তরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সারাদিন নানা কার্যক্রমে জড়িত ছিল।
এক পর্যায়ে দেশে সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়, কলেজ এমনকি কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থীভার্চুয়ালে সরাসরি অংশ নিয়ে উপস্থিত দাতাদের ধন্যবাদ সহ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। দি অপটিমস্ট বোর্ড অব ডাইরেক্টরদের পক্ষে উপস্থিত সকল দাতা ও তহবিল সংগ্রহ অভিযানকে সফল করে তুলতে সকল স্বেচ্ছাসেবক এবং বিভিন্ন আর্ট সামগ্রী প্রদানকারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। এ উপলক্ষে ‘দ্য নিউ হোপ’ নামক একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে মাহবুবে খুদার সম্পাদনায়। সেখানে সংস্থাটির আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ বাংলাদেশে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীদের তালিকাও রয়েছে।