ডাইং ওয়াশিংয়ের অপরিশোধিত পানিতে দূষিত হচ্ছে গাজীপুরের নদ-নদী, খাল-বিল। এতে পানির রঙ পরিবর্তনসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পরিবেশ। বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (ইটিপি) শোধন না করেই কারখানা থেকে পানি ছেড়ে দেয়ায় ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে দূষণ- বলছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। আর পরিবেশ অধিদফতর বলছে, কারখানাগুলোর ইটিপি বন্ধ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর লাগোয়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা গাজীপুরের নদ-নদীর পানির রঙ এখন কুচকুচে কালো। এছাড়াও আশপাশের ডাইং ওয়াশিং কারখানার তিন-চার রঙয়ের পানি প্রতিনিয়ত মিশছে এখানকার নদী-খালে। কারখানার তরল বর্জ্য অপরিশোধিতভাবে নির্গত হওয়ায় ভয়াবহ দূষণের কবলে এখানকার নদ-নদী। দূষণের কারণে মাছসহ জলজ প্রাণীও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পানি স্পর্শ করলেই চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে ভোগেন স্থানীয়রা। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের।
স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘নদী তীরবর্তী যেসব শিল্পকারখানা হচ্ছে, সেগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠছে। এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ায় পানি দূষিত হচ্ছে। তিন-চারটি রঙয়ের পানি প্রতিনিয়ত মিশছে নদীতে। এতে পরিবেশ দূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।’
তুরাগ নদের এক নৌকার মাঝি বলেন, ‘আগে এই নদের পানি দিয়ে ভাত রান্না করে খাওয়া যেত। এখন সেটা চিন্তাও করা যায় না। মাছেরও স্বাদ নেই, বিচ্ছিরি রকমের গন্ধ। খাওয়া যায় না।’
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, নিয়মিত ইটিপির মাধ্যমে শিল্পের রাসায়নিক মিশ্রিত পানি শোধন না করায় দূষণের মাত্রা বাড়ছে।
শ্রীপুর নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘নদী রক্ষায় শিল্পকারখানাগুলোতে বায়োলজিক্যাল ইটিপির ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এসব ইটিপি ঠিকমতো কাজ করছে কি না সে বিষয়ে সরকারের তদারকিও বাড়াতে হবে।’
এদিকে, ইটিপি বন্ধ পেলেই শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মো.নয়ন মিয়া বলেন, ‘যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ইটিপি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠান যাতে চলতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, গাজীপুরে প্রায় ২ হাজার ১৬৫টি নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক কারখানা ১ হাজার ১৮৭টি।