টি-টোয়েন্টি—ক্রিকেটের এ সংস্করণের নাম এলেই চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠবে ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, কাইরন পোলার্ডদের মুখ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একেকজন মহাতারকা তাঁরা। তাঁদের অসাধারণ নৈপুণ্যে ভর করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বোচ্চ দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মুকুট মাথায় পরেছে তারা। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি তিনটি ফাইনাল খেলা দল শ্রীলঙ্কা।
অথচ এবারের বিশ্বকাপে এ দুই দল কিনা নেই টুর্নামেন্টের সুপার টুয়েলভে। শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খেলতে হচ্ছে প্রথম পর্বে। পরোক্ষে যে পর্ব সুপার টুয়েলভে ওঠার ‘বাছাইপর্ব’! কেউ হয়তো আপত্তি করতে পারেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর যে অংশে সব কটি দলের অংশগ্রহণ নেই, অর্ধেক দল আগেভাগেই পরের ধাপে জায়গা করে নেয়, সেটি ‘বাছাইপর্ব’ ছাড়া আর কীই–বা হতে পারে!
আরও পড়ুনটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে যা জানা জরুরি
বাছাইপর্ব উতরে আসা দলগুলোর সঙ্গে প্রথম রাউন্ডে মূলত খেলছে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলগুলো। আর র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণেই এই পর্বে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ এক দশক আগের বিশ্বকাপেই ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
-ADVERTISEMENT-
Ads by
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছে সাতবার। এই সাত আসরে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি উইকেট, টুর্নামেন্টসেরা ব্যাটিং, টুর্নামেন্টসেরা বোলিংয়ের বেশির ভাগ তালিকাতেই শীর্ষ নামগুলো এ দুই দলের।
ব্যাটিংয়ের তালিকাটাই দেখুন। সবচেয়ে বেশি রান শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনের। ২০১৪ সালে শেষবার টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটসম্যান ৩১ ম্যাচে করেছেন ১০১৬ রান। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আরও দুটি আসর পার হয়ে গেছে, জয়াবর্ধনে এখনো শীর্ষেই।
আরও পড়ুনবিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে কখন কার খেলা
৮৯৭ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় যিনি তৃতীয়, সেই তিলকারত্নে দিলশানও শ্রীলঙ্কান। টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কান ও ক্যারিবিয়ানদের দাপট কেমন ছিল বুঝতে আরেকটি তথ্যেও চোখ রাখতে পারেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৬৫ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের।
অর্থাৎ এখনো সবচেয়ে বেশি রান করা প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের তালিকায় শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। সবচেয়ে বেশি দুটি সেঞ্চুরি আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নয়টি ফিফটিও গেইলের।
সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বটা বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের (৪১টি)। ৩৯টি নিয়েছেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু তালিকার তৃতীয় ও পঞ্চম স্থান দুটি দুই শ্রীলঙ্কানের—লাসিথ মালিঙ্গার ৩৮, আর অজন্তা মেন্ডিসের ৩৫।
আরও পড়ুনকারা খেলছেন বিশ্বকাপে, দেখে নিন একঝলকে
একক আসর হিসাব করলে সাতবারের মধ্যে দুবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ২০০৯ সালে দিলশান (৩১৯ রান), ২০১০ আসরে জয়াবর্ধনে (৩০২ রান)। উইকেটেও একই সাফল্য। ২০১২ আসরের সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন মেন্ডিস। গত বছর হওয়া সর্বশেষ আসরে ১৬ উইকেট ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার।
ব্যক্তিগত এসব অর্জনে ভর করে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছিল দলগত সাফল্য। তিনবার ফাইনাল খেলে একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া শ্রীলঙ্কা এখন পর্যন্ত ৪৩ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২৭টিতে। জয়ের হার ৬৩.৯৫। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত খেলা ২১টি দলের মধ্যে যে হার সর্বোচ্চ। ৩৬ ম্যাচ খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ১৮টিতে, এক ড্র আর এক টাইয়ের ফলে জয়ের হার ৫২.৮৬।
আরও পড়ুনটি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবার যে ১০টি রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে
কিন্তু যাঁদের হাত ধরে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্য, তাঁদের কেউই এখনকার দলে নেই। ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিদায় নিয়েছেন জয়াবর্ধনে, দিলশান শেষ খেলেছেন ২০১৬ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই গেইল, রাসেল, অবসর নিয়েছেন পোলার্ডও।
সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মুখগুলো নেই বলে অবশ্য শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনাও মিইয়ে যায়নি। গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হাসারাঙ্গার সঙ্গে দুষ্মন্ত চামিরার মতো বোলার আছেন শ্রীলঙ্কা দলে।
সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে দাসুন শানাকারা। অন্যদিকে, নিকোলাস পুরানের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও আছেন একঝাঁক টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়।
তবে শিরোপা লড়াইয়ে নামার আগে আপাতত ‘ছোট’দের সঙ্গে লড়তে হবে দুটি দলকেই।
গ্রুপ ‘এ’তে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গ্রুপ ‘বি’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলবে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক শানাকার মতে, প্রথম রাউন্ড খেলাটা তাঁর দলের জন্য একপ্রকার ভালোই হবে। অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর লঙ্কান অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আসল টুর্নামেন্টের জন্য ভালো হবে।’
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক পুরানের মন্তব্যে ছিল প্রথম রাউন্ডে খেলার হতাশা কাটিয়ে ওঠার সুর, ‘অহম সরিয়ে রেখেছি আমরা। আমাদের এখন সামনের পথের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
‘অহম’ আর ‘আসল টুর্নামেন্ট’—দুই অধিনায়কের এই দুই শব্দচয়নই বলে দিচ্ছে, ভেতরে কী আগুন পুষে রেখে প্রথম রাউন্ড খেলতে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা!