প্রথম দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের লোগো উন্মোচন করল সিলেট স্ট্রাইকার্স।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডামাডোলের মাঝেই দেশে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের আনুষ্ঠানিকতা। বুধবার নিজেদের লোগো উন্মোচন করল বিপিএলের নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। টুর্নামেন্ট শুরুর প্রায় আড়াই মাস আগে আইকন ও বিদেশি খেলোয়াড়দের নামও জানাল দলটি।
ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানাধীন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে এবার আইকন হিসেবে খেলবেন বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রংপুর রাইডার্স, ঢাকা প্লাটুন ও মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার পর এবার সিলেট দলে দেখা যাবে মাশরাফিকে।
রাজধানীর একটি হোটেলে লোগো উন্মোচনের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে আইকন হিসেবে মাশরাফিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। একইসঙ্গে নিজেদের থিম সং, চার বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচিং প্যানেলের নাম জানিয়েছে বিপিএলের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
আগামী বছর জানুয়ারির ৫ তারিখ শুরু হবে বিপিএলের নবম আসর। কাছাকাছি সময়ে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার এসএটি-টোয়েন্টি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলটি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। তাই তারকা বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রাপ্যতা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এর মাঝেই তিন শ্রীলঙ্কান ও এক পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়েছে সিলেট।
বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে সিলেট দলে দেখা যাবে পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির ও শ্রীলঙ্কার তিন অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসকে। এ চারজনকেই পুরো আসরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
সিলেট দলের টিম ম্যানেজার হিসেবে থাকবেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। রাজিন সালেহ ও নাজমুল ইসলামকে নেওয়া হয়েছে সহকারি কোচ হিসেবে। ব্যাটিং কোচের দায়িত্বটাও পালন করবেন রাজিন। এর বাইরে সৈয়দ রাসেল ফাস্ট বোলিং কোচ, মুরাদ খান স্পিন বোলিং কোচ ও ডলার মাহমুদকে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হেড কোচ হিসেবে কারও নাম জানায়নি সিলেট স্ট্রাইকার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফরের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই ওয়াসিমকে হেড কোচ হিসেবে ঘোষণা করবে তারা।
বিপিএলের আগের আসরগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন মালিকের অধীনে ভিন্ন নামে খেলেছে সিলেট। তবে ভালো করতে পারেনি সিলেটের নাম নিয়ে খেলা কোনো দলই। ২০১৩ সালের আসরে প্রথম পর্ব পেরোনোই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য।
এবার নতুন মালিকের অধীনে সিলেটের হয়ে ভালো কিছু করার আশা ব্যক্ত করেছেন চারবারের বিপিএলজয়ী অধিনায়ক মাশরাফি। লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে সিলেট স্ট্রাইকার্সের সম্ভাবনা ও বিদেশি খেলোয়াড়দের ব্যাপারে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক।
“আমি আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব নিশ্চিত। সিলেট হয়তো কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বা ভালো করতে পারেনি। এজন্য শুরু থেকেই বলেছি টিম ম্যানেজম্যান্ট শক্ত করতে। যতটুকু সম্ভব তা করা হয়েছে। এছাড়া নিলামের (ড্রাফট) ওপরেও নির্ভর করে। সেখান থেকে খেলোয়াড় কারা আসে তাও দেখতে হবে। মাঠের ভেতরে শৃঙ্খলা কেমন, তাও গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে কেমন খেলতে পারব তখন আসলে বোঝা যাবে। আমরা আশাবাদী। সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ ভালোভাবে হচ্ছে।”
মাশরাফির আশা, বিপিএলের অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজির মতো হুট করে এসে হারিয়ে যাবে না ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। দেশের ক্রিকেটে তারা সাহায্য করবেন বলে আশাবাদী সিলেট স্ট্রাইকার্সের আইকন খেলোয়াড়।
“এখন মাত্র শুরু হলো। খুব ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। কমের মধ্যে যতটুকু করা যায়, ততটুকুই করার চেষ্টা করেছেন ওনারা। এজন্য তারা ধন্যবাদ প্রাপ্য। কারণ অনেক জায়গায় দেখেছি অনেক বড় করে এসে শেষপর্যন্ত আর থাকতে পারে না। আমি আশা করি দীর্ঘসময় টিকবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তারা সাহায্য করতে পারবে।”
বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে অলরাউন্ডার বেশি থাকায় দলের কম্বিনেশন ভালো হবে বলে মনে করেন মাশরাফি। তবে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে দেশি খেলোয়াড় কেমন পাওয়া যায় সেটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন সিলেটের আইকন।
“বিদেশি খেলোয়াড়দের বিষয়টা হলো… একইসময়ে বেশ কয়েকটি লিগ চলবে। যে কারণে তাদের প্রাপ্যতার একটা বিষয় আছে। একইসঙ্গে বাজেটের একটা বিষয় থাকে এসব টুর্নামেন্টে। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলবো ঠিক আছে। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে যদি মেলান, অনেকে হয়তো বলবে না, তবে দিন শেষে যেটা বললাম, এরা (চার বিদেশি) সবাই পারফর্মার।”
“এই টুর্নামেন্টে কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড়দের চেয়ে দেশি খেলোয়াড়দের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। কারণ দেশিই খেলবে ৭ জন। তাই নিলামে (ড্রাফট) আমরা যদি মোটামুটি অবস্থানে থাকতে পারি, তাহলে খারাপ হবে না। কারণ আমাদের চারজন বিদেশিই বোলিং পারে। তার তিনজনই আবার ব্যাটসম্যান। তাই এখানে কম্বিনেশন করতে কিছুটা সহজ হবে।”
গত এপ্রিলের পর আর খেলার মধ্যে নেই মাশরাফি। ছয় মাসে ফিটনেসেও দেখা দিয়েছে ঘাটতি। তাই প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি আদৌ বিপিএলের পুরো আসরে খেলতে পারবেন কি না? মাশরাফি নিজেও চিন্তা করছেন নিজের ফিটনেস নিয়ে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এটি ঠিক করে ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
“অবশ্যই আমার ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটের বাইরে, অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এখন যেহেতু সামনে ২-৩ মাস পর টুর্নামেন্ট আসছে, আমি কঠোর পরিশ্রম করব এবং ফিটনেসের উন্নতির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট হওয়ার কথা রয়েছে।