ভারতে হেট স্পিচ তথা ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ভাষণ, বক্তব্য ও মন্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির শীর্ষ আদালত বলেছেন, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ও ভাষণের ক্ষেত্রে অভিযোগের জন্য অপেক্ষা না করেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে অপরাধীকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) এক রুলিংয়ে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের পুলিশ প্রধানকে নির্দেশনা দেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।
সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের যে ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান, তা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। আরও বলা হয়, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘটনায় প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আদালত অবমাননার মামলা রুজু করা হবে।
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ ভাষণ যেন যথাযথ তদন্ত করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যকে সেই নির্দেশ দেয়ার আবেদন জানিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শাহিন আবদুল্লা নামে এক সাংবাদিক। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) কেন্দ্র ও রাজ্যের জবাব চান শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সেই মামলায় নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি হৃষিকেশ রায়ের বেঞ্চ। ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণের ঘটনাকে ‘অত্যন্ত গুরুতর বিষয়’ বলে অভিহিত করেন তারা। তারা জানান, এ ধরনের ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে যদি দেরি হয়, তাহলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে।
শুনানি চলাকালে মামলার বাদীর আইনজীবী ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেন। পশ্চিম দিল্লির বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মার কথাও জানান তিনি। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মুসলিমদের ‘সম্পূর্ণ বয়কট’ ডাক দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যত্রতত্র ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
সাংবিধানিকভাবে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শঙ্কিত শীর্ষ আদালত। বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে দুই বিচারপতির বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এখন একবিংশ শতক। কিন্তু ধর্মের নামে আমরা কোথায় এসে পৌঁছেছি।’
নির্দেশনায় যেকোনো ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য বন্ধে পদক্ষেপ নিতে দুই রাজ্যর পুলিশপ্রধান ও দিল্লি পুলিশকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন আদালত। বলেন, যে বা যারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ছাড়া উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড প্রদেশে যারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এমনকি ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ বা মামলা না করলেও নিজ থেকে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হলে তা আদালত অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আদালত।