Saturday , December 21 2024
Breaking News

বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম কমছে, বাড়ছে দেশে

বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টো চিত্র। এক সপ্তাহে গমের দাম বাড়ছে তো আরেক সপ্তাহে চালের দাম বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কেনা চাল-গম দেশে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু তা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।

চাল আমদানি বাড়াতে সরকার বেসরকারি খাতকে শুল্ক কমিয়ে দিয়ে সুবিধা দিয়েছে। তাতেও আমদানি বাড়ছে না, বরং এই প্রথমবারের মতো দেশের বাজারে আটার দাম চালের দামকে ছাড়িয়ে গেছে। চালের দাম বেড়ে গেলে সাধারণত দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে আটা কেনা ও খাওয়া বাড়ে। আর গম-আটার দাম বাড়লে মানুষ চালের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ায়। একসঙ্গে প্রধান দুই খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বিপদে পড়েছে।

এদিকে চলতি মাসে প্রকাশ করা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের মূল্যবিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম কমতে শুরু করেছে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল ও গমের মতো দানাদার খাদ্যের দাম ৩ শতাংশ কমে।

বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম কমছে, বাড়ছে দেশে
সরকারের উচিত, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে করা চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা। ডলার ও রিজার্ভ–সংকটের এই সময়ে বাড়তি ডলার ব্যয় করা ঠিক হবে না।
এ এম এম শওকত আলী, সাবেক কৃষিসচিব

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এফএওর পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে খাদ্যের দাম বাড়বে। ওই যুক্তি তুলে ধরে সরকার রাশিয়া থেকে ৪৩০ ডলার দরে (প্রতি টন) পাঁচ লাখ টন গম কেনার চুক্তি করে। যদিও ওই সময়ে ৩৮০ ডলার দরে রাশিয়া বিশ্ববাজারে গম বিক্রি করছিল। বেশি দামে কেনা রাশিয়ার ওই গমের এক লাখ টন ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার গমের দাম প্রতি সপ্তাহে কমছে। গত এক সপ্তাহে রাশিয়ার গম প্রতি টনে ৯ ডলার কমে দাম দাঁড়িয়েছে ৩২৩ ডলার। এখন চুক্তি করলে জাহাজভাড়া, অন্যান্য খরচসহ তা ৪০১ ডলার পড়বে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিয়েতনাম থেকে সেদ্ধ চাল প্রতি টন ৫২১ ডলার ও আতপ চাল ৪৯৪ ডলার দরে কেনা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে ওই চাল আন্তর্জাতিক বাজারদর থেকে প্রতি টনে ৭৮ ডলার বেশি দিয়ে কেনার চুক্তি হয়। একই সময়ে ভারত থেকে এক লাখ টন এবং মিয়ানমার থেকে দুই লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়।

কিন্তু বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যশস্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনাম থেকে জাহাজভাড়া, অন্যান্য খরচসহ চাল কিনতে গেলে এখন প্রতি টনের দাম দাঁড়াবে ৪৮৫ ডলার। ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আনা চালের দাম পড়বে যথাক্রমে ৪২০ ও ৪৬৮ ডলার।

‘ডলার–সংকট ও ভারতের বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আমদানি করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা সময়মতো চাল আনার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’
চিত্ত মজুমদার, দেশের অন্যতম চাল আমদানিকারক মজুমদার ট্রেডার্সের মালিক

অর্থাৎ এখন রাশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে গম–চাল কিনলে প্রতি টনে ২৯ থেকে ৩৬ ডলার কম পড়ত।

জানতে চাইলে সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম ওঠানামার সময় একসঙ্গে অনেক চাল-গম কেনার চুক্তি না করে পর্যায়ক্রমে অল্প অল্প করে আমদানি চুক্তি করা উচিত, যাতে দাম কমে গেলে সরকার কম দামে কিনতে পারে। ফলে সরকারের উচিত, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে করা চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা। ডলার ও রিজার্ভ–সংকটের এই সময়ে বাড়তি ডলার ব্যয় করা ঠিক হবে না।

এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে চাল-গম কেনার বিষয়টি মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। আমরা দাম কমার বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরব।’

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে চাল-গমের দাম বাড়ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। এক মাসে দেশের দ্বিতীয় প্রধান এই খাদ্যের দাম ৪ থেকে ১১ শতাংশ বেড়েছে।

বেশি দামে কেনা চাল-গম আসছে
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাশিয়ার গমের পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমার থেকেও চালের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ভিয়েতনামের চাল নিয়ে একটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকেও গমের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

বাজারে চাল ও গমের সরবরাহ বাড়াতে বেসরকারি খাতকে কর ছাড়সহ নানা সুযোগ দেওয়া হলেও আমদানি গতি পায়নি। সরকার গত জুলাইয়ে প্রায় ৪০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৪২ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। এ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টন চাল আমদানি করেছেন।

এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৯১ হাজার টন আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৯ হাজার টনের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্কছাড়ের সুযোগ নিয়ে তাঁদের চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

দেশের অন্যতম চাল আমদানিকারক মজুমদার ট্রেডার্সের মালিক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলার–সংকট ও ভারতের বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আমদানি করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা সময়মতো চাল আনার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’

মজুত ভালো, গরিবের বরাদ্দ বাড়েনি
সরকারি পর্যায়ে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের চাল ও গমের মজুত পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের প্রধান ওই দুই দানাদার খাদ্যের মজুত দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে চাল আছে প্রায় ১৪ লাখ টন ও গম ১ লাখ ৮০ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বর্তমান মজুতকে সন্তোষজনক বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের উচ্চ মূল্য ও রিজার্ভ–সংকটের কারণে বিশ্ববাজার থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি কমেছে। দামও বাড়ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভাত, গম ও আলুর মতো খাবারের ওপর গরিব মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়ে।

About Banglar Probaho

Check Also

আ.লীগ ও সহযোগীদের কাছে লোক চেয়েছে যুবলী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published.