Sunday , December 22 2024
Breaking News

গরিবের মাংস হিসেবে পরিচিত ডাল দরকারের চেয়ে খুবই কম খেতে পারছেন দেশের মানুষ

মতিনুজ্জামান মিটু: সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ডাল চাষ হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে এদেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে ডাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ডাল গরিবের মাংস হিসেবে পরিচিত ডালে পাওয়া যায় সহজে হজমযোগ্য আমিষ। বিভিন্ন সুত্রের বরাতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডাল গবেষণা উপকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. ওমর আলী জানান, বিশ^ খাদ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন একজন মানুষের ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম ডাল খাওয়া উচিত। কিন্তু এদেশের মানুষ খায় মাত্র ১৭ গ্রাম। যা দরকারের চেয়ে খুবই কম। অথচ দেশে স্বল্প পরিচর্যা ও বৃষ্টিনির্ভর ফসল হিসেবে ডালের চাষ হয়ে আসছে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টিস্বল্পতা দূর করতে, মাটির হারানো উর্বরশক্তি ফিরে পেতে, মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে, সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ডালের আবাদ বাড়ানো এসময়ের অগ্রগণ্য দাবি। ডাল আবাদে জমির পরিমাণ বাড়াতে উন্নত জাত ও প্রযুক্তি, ভালো বীজ এবং অনেক ক্ষেত্রে উপযোগী জমির বিষয়ে খেয়াল রেখেই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডাল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন উচ্চফলনশীল জাত ও উন্নত প্রযুক্তি। এসব উন্নত প্রযুক্তির মধ্যে ডাল ফসলের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য, ডাল ফসলের সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ওপরই অনেকাংশেই নির্ভর করে বীজের মান। কিন্তু সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময়ই সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করার জন্য বীজের পরিমাণ ও গুণাগুণ অনেকাংশে কমে যায়।
গবেষণায় দেখা যায়, অন্যান্য সব বিষয় অপরিবর্তিত রেখেও শুধু ভালও বীজ ব্যবহারের মাধ্যমেই কোন ফসলের ফলন ১৫ থেকে ২০শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। আর ভালো মানের বীজ থেকেই পাওয়া যায় ভালও ফসল। তাই ভালো বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং তা সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
মুগডালের ভালও বৈশিষ্ট্যের বীজে উচ্চফলনশীল হতে হবে, বীজ বিশুদ্ধ হতে হবে, বীজ রোগ ও পোকামুক্ত এবং রঙ হবে উজ্জ্বল, সম আকারের বীজ দানা পুষ্ট হতে হবে, বীজে পানির পরিমাণ ৯ থেকে ১০শতাংশের মধ্যে থাকতে হবে, সর্বোপরি বীজের গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৭৫ ভাগের ওপরে হতে হবে, দেশে ৪ ধাপে বীজ বেড়ে থাকে।
মৌল বীজ (ব্রিডার বীজ), ভিত্তি বীজ, প্রত্যয়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ এবং এগুলোর সঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত। কৃষকরা প্রত্যয়িত বীজ ও মানঘোষিত বীজ উৎপাদন করতে পারেন। এসব বীজের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য সরকার নির্ধারিত নির্দিষ্ট মানদন্ড মেনে চলা হয়।
মুগডাল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য সঠিক সময়ে ফসল কাটলে একদিকে বেশি ফলন, অন্যদিকে মানসম্মত ফসলও পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে না কাটলে ৫ থেকে ৭শতাংশ ফসল দানা ঝরে মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য পাকা ডাল জমিতে বেশি সময় না শুকিয়ে সময়মতো কেটে সরাসরি মাড়াই স্থানে নেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, ফসল কাটতে হবে কিন্তু মাটি থেকে টেনে উঠানো ঠিক নয়। এতে শিকড়ের সঙ্গে মাটিসহ অন্যান্য উপাদান মিশে বীজের গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং মাটিও তার কিছুটা জৈব পদার্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
মাড়াই ও শুকানোর স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া দরকার। মাড়াই ও শুকানোর জন্য পলিথিন সীট, পাকা মেঝে বা মাটির ওপর গোবরের প্রলেপ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাড়াই ও শুকানোর স্থান অবশ্যই পোকামাকড় ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। বিভিন্ন ময়লা দানার সঙ্গে মিশে দানাকে খাওয়ার বা বীজের অনুপযোগী করে তোলে, যার ফলে ফসলের বাজারমূল্যও কমে যায়।
সাধারণত বেশি পাকলে দানা ঝরে যায়। শুঁটি বা পড কালচে রঙ হলে বুঝতে হবে পেকেছে। খরিফ-১ ও বিলম্ব রবিতে সব ফল বা পড এক সঙ্গে পাকে না। ২ থেকে ৩ বারে ফল সংগ্রহ করতে হয়। পরিষ্কার সূর্যালোকে ফল তুলে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে মাড়াই করতে হবে। তবে খরিফ-২ মৌসুমে সব ফসল একসঙ্গে পাকে, তখন গাছ কেটে এনে শুকিয়ে গরু ঘুরিয়ে বা লাঠি দিয়ে খুব সাবধানে পিটিয়ে মাড়াই করতে হবে।
দানা সবসময় পরিষ্কার স্থানে শুকানো দরকার। ঝাড়াই কাজে বাঁশের কুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ফ্যানের বাতাসে বা মেশিনের সাহায্যেও বীজ ঝাড়াই বাছাই করা যেতে পারে। তবে প্রবল বাতাসে দানা ঝাড়াই করা উচিত নয়। সঠিক মাপের চালুনি দিয়ে দানা চেলে নিতে হবে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঝাড়াইয়ের সময় মুখে পাতলা কাপড় বেঁধে নেওয়া ভালও।
মাড়াইকরা মুগডাল পরিষ্কার করে সূর্যের তাপে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। বীজ সারাদিন ধরে না শুকিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা করে ৩ থেকে ৪ দিন শুকালে বীজ ভালও থাকে। শুকানোর সময় হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ক্ষতি এড়াতে পলিথিন শিট ব্যবহার করা ভাল। আর্দ্র বীজ একসঙ্গে বেশি পরিমাণ জড়ো করে না রেখে ছড়িয়ে রাখা উচিত। বৃষ্টির পর বীজ আবার শুকিয়ে নিতে হবে। বীজ এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে বীজে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯ থেকে ১০শাতংশ থাকে। বীজ দাঁতের নিচে দিয়ে কট শব্দ করলে বুঝতে হবে বীজ শুকিয়েছে। শুকানো বীজ বাতাসে রেখে ঠান্ডা করতে হবে। বীজের আর্দ্রতা ৯ থেকে ১০শতাংশ, বিশুদ্ধতা ৯৫শতাংশ এবং অংকুরোদগম ক্ষমতা ৭৫শতাংশের ওপরে হতে হবে।
গুদামে বা পাত্রে রাখার আগে ডালবীজ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সব বীজ থেকে প্রতি ১০ গ্রাম করে ৩টি নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এবং তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে ওই ডালের নমুনা বীজে কোনও পূর্ণাঙ্গ পোকা বা বীজের ওপর সাদা ডিম আছে কি না। যদি কোনও পোকা বা সাদা ডিম না থাকে তাহলে বীজ যে কোনও ছিদ্রহীন পাত্র যেমন: আলকাতরার প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র, টিন, লোহা, কাঠের পাত্র এবং মোটা পলিথিন ব্যাগে রাখা যায়। পলিথিন লাইনিংযুক্ত বস্তায়ও বীজ রাখা যেতে পারে।
ডাল ফসল সংগ্রহের পরই সংরক্ষণ জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। বীজের আর্দ্রতা এবং গুদামের তাপমাত্রা এদুটো বিষয়ের ওপরই প্রধানত গুদামে ডাল ফসলের গুণগতমান নির্ভর করে। এজন্য গুদামে এ দুটো বিষয়ই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সঠিকভাবে গুদামজাতকরণের অভাবে প্রায় ১২ থেকে ১৫শতাংশ দানা নষ্ট হয়। কারণ গুদামে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বীজে পোকা ও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সঠিকভাবে আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে উন্নত গুদাম এবং সঠিক স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্বের ব্যবস্থা করতে হবে। ডাল ফসলের বীজ সাধারণত কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ডিলাররা পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের গুদাম বা পাত্রে সংরক্ষণ করে থাকে।

About Banglar Probaho

Check Also

আ.লীগ ও সহযোগীদের কাছে লোক চেয়েছে যুবলী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published.