পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে বর্ধিত হারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গৃহকর আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’র সভাপতি নুরুল আবছার চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি দায়ের হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল। নুরুল আবছার চৌধুরী (৬০) নগরীর সদরঘাট থানার কদমতলী এলাকার বাসিন্দা।
মামলার বাদী মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মাদারবাড়িতে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নুরুল আবছার চৌধুরী মেয়র মহোদয়কে তুই-তোকারি করে অশোভন ভাষায় কথা বলেন। মেয়রকে চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাবার জন্যও হুমকি দেন। নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে বসে আমি একটি অনলাইন টেলিভিশনে এই বক্তব্য শুনি। মেয়রের বিরুদ্ধে মানহানিকর, উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় আমি মামলা দায়ের করেছি।’
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় নুরুল আবছার চৌধুরী নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।’
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সভাপতি নুরুল আবছার চৌধুরী স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক অনুসারী ছিলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামের ভাষায় হাস্যরস করে বক্তব্য দিতেন, তিনিও একইভাবে বক্তব্য দেন। মেয়র সাহেবকে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য তিনি দেননি। শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ভাষায় কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমরা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’
কিন্তু সম্প্রতি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। ‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’- এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।