বাংলার প্রবাহ রিপোর্ট: রংপুরের পীরগঞ্জে দুটি শিশুকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় বাবা ও সৎ মাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে পীরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, পিরোজপুরের কাউখালী থানার শিয়ালকাঠী এলাকার মোছা. মুনিয়া আক্তারের সাথে রংপুরের পীরগঞ্জ শানেরহাট খোলাহাটী এলাকার কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতুর ৮ বছর আগে বিয়ে হয়। পরে তাদের সংসারে দুটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এদিকে, জাহিদুল ইসলাম সেতু ঢাকায় চাকরি করতেন। পরে জানা যায় তিনি ঢাকায় গোপনে আরও একটি বিয়ে করেন।
নির্যাতিত শিশু দুটির মা জানান, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর শিশু সন্তান দুটিকে আটকে রেখে আমাকে জিম্মি করে তালাকনামায় জোর করে স্বাক্ষর নেন। পরে সন্তান দুটিকে ফেরত চাইলে তারা সন্তানদের মারধর করেন। এছাড়া তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তিনি আরও জানান, পরবর্তী সময়ে স্ত্রী মুনিয়া কোনো উপায় না পেয়ে ঢাকা চলে যায় এবং গার্মেন্টেসে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আশপাশের পরিচিত লোকজনদের মাধ্যমে সন্তান দুটির খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন প্রায় সময় সন্তান দুটিকে সৎ মা সুমনা বেগম নির্যাতন করে ঠিকমতো খেতে দিতো না।
গত ৯ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে সৎ মা সুমনা সন্তান কাজী জোনায়েদ হোসেনকে (৩) লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এ সময় অপর সন্তান মো. কাজী জাবীর হোসেনকে (০৪) বুকে-পিঠে লাথি মারে ও ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাত করে। ঘটনার সময় প্রতিবেশীরা শিশু দুটিকে উদ্ধারের অনেক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়। পরে তারা জানালার ফাঁক দিয়ে ভিডিও করেন। সেই ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি জানতে পেরে সন্তার দুটির মা গত ১৯ আগস্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন কাজী জাহিদুল ইসলাম সেতু (২৯) ও সৎ মা মোছা. সুমনা বেগম (২১)।
গত ৩ সেপ্টেম্বর পীরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আমলী আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন সৎ মা ও বাবা। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। এসময় শিশু দুটিও আদালতে উপস্থিত ছিল। পরে শিশু দুটিকে ম্যাজিস্ট্রেট দাদা কাজী শামিম হোসেনের জিম্মায় দিয়ে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার এসআই মিলন জানান, নির্যাতনের বিষয়টি বড়ই অমানবিক। তদন্ত চলমান রয়েছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট পেলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
বাংলার প্রবাহ/সুমন