বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সংকটের ‘শিকার’ হওয়া নিয়ে পাকিস্তানের জোরালো প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার একটি নতুন কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্প্রতি আল-অ্যারাবিয়া পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
এর আগেও পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার’ হওয়ার কথা বলে কয়েক বিলিয়ন ডলার এবং অনেক ছাড় আদায় করেছিল। যদিও এটি ছিল বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ছড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার। আর এই সময়ে পাকিস্তান গিলগিট বাল্টিস্তানের মতো সংবেদনশীল এলাকায় ব্যাপক অবকাঠামো প্রকল্প পরিচালনা করছে, যা হিমালয়ের বরফ উচ্চহারে গলার একটি কারণ এবং সুউচ্চ হিমালয়ের নদী ব্যবস্থায় তা বাধার সৃষ্টি করছে। এতে করাচির মতো শহুরে দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
যখন থেকে একটি ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানের বিশাল অংশ, বিশেষ করে সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশ ডুবেছে; তখন থেকে পাকিস্তানি মুখপাত্ররা ‘বিপর্যয়কর’ বন্যার বর্ণনা তৈরি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়ার জন্য ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে ব্যস্ত।
জলবায়ু সংকট একটি বৈশ্বিক ঘটনা এবং কোনো দেশই এর পরিণতি থেকে মুক্ত নয়। পাকিস্তানও অবশ্যই অন্য অনেকের মতোই এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সম্প্রতি বলেছে যে আবহাওয়া-সম্পর্কিত দুর্যোগ; যেমন, পাকিস্তানের বন্যা গত ৫০ বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বন্যায় সেখানে গড়ে প্রতিদিন ১১৫ জন মানুষ মারা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বোঝা একটি বিকশিত বিজ্ঞান। তবে আবহাওয়ার ধরনে নজিরবিহীন পরিবর্তনের জন্য দায়ী কিছু মূল কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। এ ধরনের একটি কারণ মানবসৃষ্ট; যেমন: বন উজাড়, দ্রুত নগরায়ণ, ক্ষতিকারক ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র, খনি এবং পাহাড়ে নির্মাণ; যা হিমবাহ গলানোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
জেনারেল জাভেদ বাজওয়া বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সে সময় শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক নির্মাণকাজের বিষয়ে মন্তব্য করেন। বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক গ্রুপ, ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন, সেপ্টেম্বর ২০২২-এর বিশ্লেষণে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার জন্য মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।
সেই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বর্তমান দুর্যোগের অন্যতম প্রধান কারণ ক্ষতির মুখে বসবাসকারী মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আলী তৌকির শেখ গত আগস্টে পাকিস্তানের পত্রিকা ডন-এ আরও স্পষ্ট করে লিখেছেন, ‘আমাদের ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়ন মডেলটি শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের জীবনকে অনিরাপদ করে তুলেছে। নিঃসন্দেহে মুষলধারে বৃষ্টি অনেক এলাকায় নজিরবিহীন ছিল, কিন্তু বর্ষার পানি প্রাথমিকভাবে ক্ষিপ্ত কারণ আমরা তাদের পথ চেপে ধরেছি। বন্যার পানি কেবল তাদের পথের অধিকার পুনরুদ্ধার করছে।’
এটা জানা যে, জলবায়ু বিপর্যয় প্রায়ই মানবসৃষ্ট উন্নয়ন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কারণে ঘটে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই। পাকিস্তানের ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি ঘটনাই যথেষ্ট–করাচির বন্যা এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্প (সিপিইসি), যে বিষয়গুলো নিয়ে খুব কমই কথা বলা হয়।
জুলাইয়ে যখন পাকিস্তানে বন্যার বিষয়টি শিরোনামে আসে, তখন আরিফ হাসান নামে এক স্থপতি দেশটির পত্রিকা ডনে করাচির ঘটনা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ লিখেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, অযোগ্য প্রশাসন ও পরিকল্পনা প্রতিবার বৃষ্টির সময়ই করাচিকে বন্যায় ডুবিয়েছে।