Wednesday , December 4 2024
Breaking News

বিএনপিকে ধরেবেঁধে নির্বাচনে না আনুন, অন্তত ‘ধরাবাঁধাটা’ ঠেকান

গত আগস্টে ইসির সংলাপে ২২টি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে নয়টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে।

যাঁরা মনে করেন, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাবেক নূরুল হুদা কমিশনের কোনো ফারাক নেই, তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত করছি। প্রথম কারণ, নূরুল হুদা কমিশন সরকারের ইচ্ছাপূরণ নির্বাচন করেছে ২০১৮ সালে। অর্থাৎ তারা পরীক্ষায় ডাহা ফেল করেছে। বর্তমান কমিশন এখনো পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আছে। তা-ই এখনই চূড়ান্ত রায় দেওয়া যাচ্ছে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশন, তথা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কথাবার্তায় মনে হতো, তাঁরা সরকারের ইচ্ছাপূরণের নির্বাচন করার জন্যই এসেছেন; যদিও এই পাঁচ কমিশনারের একজন—মাহবুব তালুকদার সত্য বলতে দ্বিধা করতেন না। বর্তমান ইসির কর্তাব্যক্তিরা মাঝেমধ্যে সত্য কথা বলার চেষ্টা করেন। তাঁদের কর্মকাণ্ড এখনো বৈঠক, আলোচনা, মতবিনিময় ও সংবাদ সম্মেলনে সীমিত।

নির্বাচনের অংশীজন কিংবা জনগণের ভাবনা নিয়ে নূরুল হুদা কমিশনের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট ছিল, সে কথা স্বীকারই করতে চায়নি। বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আভাসে-ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে একটি সংকট চলছে। কিন্তু তিনি বা তাঁর সহকর্মীরা বুঝতে পারছেন না, কীভাবে সেই সংকট কাটাবেন।

সবকিছু মিলে ইসির মধ্যে যে একধরনের অস্থিরতা চলছে, তা তাঁদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে বোঝাই যায়। প্রশ্ন উঠেছে, সংবিধান ইসিকে যে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে, তা কি এর পদাধিকারীরা প্রয়োগ করতে পারবেন, না অন্য কারও ইচ্ছাপূরণের সহযাত্রী হবেন? ইসি কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের সেই কাজকে অংশীজন, তথা জনগণ কীভাবে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে ইসির পক্ষে শতভাগ স্বাধীনতা নিয়ে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করা কেবল কঠিন নয়, অসম্ভবও। বিএনপির আমলে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের সময় ভারপ্রাপ্ত সিইসি ছিলেন সফিউর রহমান, যিনি ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের দৃঢ় সমর্থক। কোনোভাবে তাঁর বিএনপি সরকারের ইচ্ছা পূরণ করার কথা নয়। কিন্তু সেই উপনির্বাচনে কারচুপি ও জবরদখল ঠেকাতে পারেননি। এ জন্য সফিউর রহমান বিএনপির লোক হয়ে যাননি। মানুষ ভেবেছেন, তিনি চাইলেও নির্বাচনে যে পদ্ধতিগত কারচুপি ও জবরদস্তি হয়, সেটা মোকাবিলা করতে পারেননি।

বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে ২৪ দফা দাবিতে আন্দোলন করেছিল এবং তা সফলও হয়েছিল। বিএনপি বা তাদের মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ইচ্ছাপূরণের নির্বাচন করতে পারেননি। ১/১১-এর পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হলেও নির্বাচনী সংকট কাটেনি। আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতিতে কীভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হবে, তার কোনো রূপরেখা তারা দিতে পারেনি। স্বীকার করতে হবে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তারা একটা আপসরফার চেষ্টা করেছিল। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। কিন্তু বিএনপি সেই প্রস্তাব মানেনি।

আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে, যাতে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে ১৯৯৫-৯৬ সালে বিএনপিও অনুরূপ প্রস্তাব দিয়েছিল এবং যথারীতি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তো বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করল। আওয়ামী লীগকে এ ধরনের একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে হয়েছে, সেদিন বিরোধীদের জন্য যতটা না পরাজয়ের, আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জার। আওয়ামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেনাশাসকদের দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের শেষ পার্থক্যটুকু মুছে গেল।

বলছিলাম ইসির অস্থিরতার কথা। ইভিএম নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি অস্থিরতায় ভুগছে। একবার বলে, ইভিএম ব্যবহার করতে রাজনৈতিক মতৈক্য প্রয়োজন। এ জন্য তারা ৩০টির বেশি দলের সঙ্গে কথাও বলল; যাদের বেশির ভাগই ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে। আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নেয়। আলোচনা শেষে ইসি ১৫০টি আসনে ইভিএম ও ১৫০টি আসনে ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের এ সিদ্ধান্ত ছিল অনেকটা আপসমূলক। এক পক্ষ ইভিএমের পক্ষে, আরেক পক্ষ বিপক্ষে। অতএব, তারা ১৫০=১৫০টি ড্র ঘোষণা করল। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হলো। ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।

About Banglar Probaho

Check Also

আ.লীগ ও সহযোগীদের কাছে লোক চেয়েছে যুবলী

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আগামীকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে যুবলীগ। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি যখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published.