দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও সারা দেশের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করে সরকার। এর জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো থেকে প্রায় ২ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার সমান ঋণ নেওয়া হয়েছিল। সুদ দেওয়ার কথা ছিল আরও প্রায় ৫২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সুদাসলে ৪০ বছরে ৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা পরিশোধ করলেই মুক্তি পাওয়ার কথা।
কিন্তু সেই মুক্তি মেলেনি। গত জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। পৌনে ৩০০ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করলেও কিস্তি চালিয়ে যেতে হবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। পরিশোধ করতে হবেও হবে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ। ডলারে ঋণ নেওয়ার কারণেই এই বিপত্তি। কেননা প্রকল্প থেকে আয় হচ্ছে টাকায়, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। গত প্রায় তিন দশকে টাকার মান কমেছে ১৫০ শতাংশের বেশি। টাকার মানের পতনের কারণেই ঋণ পরিশোধ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
বৈদেশিক ঋণে আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশ। চীন, ভারত, রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে মেগা প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে। সাধারণত আন্তর্জাতিক বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যায় স্বল্প সুদে। এর হার দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত। তা পরিশোধ করতে হয় ৪০ বছরে। আর কোনো দেশ থেকে নেওয়া ঋণের সুদহার শেষ পর্যন্ত সার্ভিস, ব্যবস্থাপনা চার্জসহ নানা শর্ত যুক্ত হয়ে তা দেড় থেকে আড়াই শতাংশে গিয়ে ঠেকছে। এর বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা কঠিন শর্তও আছে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ডলারের দর ছিল ৬৯ টাকা। এখন সেই ডলারের দাম ১০৬ টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করা দর ৯৬ টাকা। সুতরাং সরকারের শুরুতে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে এখন ডলারপ্রতি বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বড় সব প্রকল্পের ঠিকাদারেরা বিদেশি। তাদের বেশির ভাগ পাওনা পরিশোধ করতে হয় ডলারে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রথমে ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধে বাড়তি অর্থ লাগছে। আবার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য এবারের বাজেটে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো লাগবে বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছে।