বাংলাদেশের মাছ মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সামুদ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে মাছ রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে বাংলাদেশকে ডিঙ্গিয়ে এই বাজারে এখনও শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে মিয়ানমার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্রোজেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সামুদ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে তারা এ ব্যবসা পরিচালনায় বাংলাদেশি পণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারছেন না। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে তাদের এই ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেখানে আশানুরূপ ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ব্যবসায়িক হাবে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রচুর সাধারণ কর্মী বসবাস করেন এবং বড় ব্যবসায়িক কমিটি এখানে প্রসার করেছে। এখানে রয়েছে তাদের প্রচুর চাহিদা তবে এটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেখানে চাহিদা আছে সেখানে আমাদের জোগান নিশ্চিত করতে হয়।
বাকেট ফুডস্টাফের চেয়ারম্যান ফ্রোজেন ব্যবসায়ী ও জাকির হোসেন ছোট্টু বলেন, ইলিশের রফতানি অনেকদিন ধরে বন্ধ। তারপরও কিছু মাছ আসে। এটা দিয়েই চালাতে হয়। তবে বেশিরভাগ ইলিশ আমরা মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসি। বাংলাদেশের মাছ দিয়ে আমরা বাজার ধরে রাখতে পারছি না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন ফ্রোজেন পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইলিশ, ইলিশের ডিম, পাবদা, কই, পাঙ্গাশ, মলা, কাচকি, শিং, লইট্টা, মৃগাল, গলদা ও বাগদা চিংড়িসহ আরও কয়েক জাতের মাছ। ব্যবসায়ীরা জানান, ইউরোপে বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে আসা তা দুরূহ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি দেশীয় শিমের বিচি, কচুর লতির চাহিদা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না আমিরাতের বাজারে।
প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজা মল্লিক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন এই ক্ষেত্রটি দেখা হয়। সরাসরি জাহাজের ব্যবস্থা থাকলে বাংলাদেশি অনেক পণ্য বাইরে রফতানি হবে এবং রেমিট্যান্স অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে বিজনেস কাউন্সিল দুবাই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আইয়ুব আলী বাবুল বলেন, এখানে বাংলাদেশি পণ্যের একটি বাজার নির্ধারণ করতে হবে এবং আমরা বিজনেস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিগত ১২ বছর ধরে সরাসরি জাহাজ চালুর দাবি করে আসছি।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্যের বাজার চাহিদা পূরণে যেসব দেশ থেকে মাছ আমদানি করে থাকেন তারমধ্যে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া উল্লেখযোগ্য। তবে বাংলাদেশের মাছ জাতীয় পণ্যের স্বাদ ও চাহিদা এ অঞ্চলে অনেক। কিন্তু নানা বাধা-বিপত্তি থাকায় পর্যাপ্ত সরবরাহ দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
আমিরাতে বাকেট নামে আজমানের বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান মিয়ানমার থেকে বছরে ২০ মিলিয়ন দিরহামের মাছ আমদানি করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন দিরহাম।